‘ওরা ১১ জন’ এর পেছনের গল্প

|

ছবি: সংগৃহীত

‘ওরা ১১ জন’- নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কতোগুলো তরুণ মুখ। চোখে স্বপ্ন-আশঙ্কা, কিন্তু তাদের মনে দৃঢ় প্রত্যয়। কাঁধে রাইফেল নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে যাচ্ছে ওরা। চাষী নজরুল ইসলামের এ সিনেমাটি আমাদের সে স্বপ্ন ও প্রত্যয় দেখিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ১১ আগস্ট। সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর।

যুদ্ধের সিনেমা বলতেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’, ‘ওয়াটারলু’, ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’, দ্য পিয়ানিস্টসহ দেশের বাইরের নানা সিনেমার কথা। কোনোটির বিষয় যুদ্ধের ভয়াবহতা, আবার কোনোটিতে রয়েছে মানবিক বিপর্যয়ের গল্প। তবে সদ্যস্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে নির্মিত ‘ওরা ১১ জন’ পৃথিবীর অনেক সিনেমা থেকেই আলাদা।

যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে সত্যিকার যোদ্ধাদের অভিনয়ের নজির বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্ব চলচ্চিত্রেই খুব কম। একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর যোদ্ধারা। সে অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, ওলীন, আতা, আবু, আলতাফরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণ সহজ ছিল না। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু—প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম।

যুদ্ধের দৃশ্যগুলো আরও বাস্তব দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল সত্যিকারের গোলাবারুদ। এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। সিনেমার প্রয়োজনে সত্যিকারের কয়েকজন রাজাকারকেও ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো শিল্পীরাও অভিনয় করেছিলেন সিনেমায়।

‘ওরা ১১ জন’ সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সংগীত। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করেছেন খোন্দকার নুরুল আলম। ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘কাঁদিস না মা’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’- গানগুলোর মাধ্যমে যুদ্ধজয়ের পর দেশের জন্য মানুষের যে ত্যাগ সে আবহ ফুটে ওঠে।

১৯৭২ সালে সিনেমাটি নির্মাণে আনুমানিক ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। নিবেদনে ছিল জাগ্রত কথাচিত্র আর পরিবেশনায় স্টার ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটরস। সিনেমা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই উঠে আসে নির্মাণ ব্যয়। সিনেমাটি ১৯৭২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

দেশে একাধিক স্বাধীনতার গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ হলেও ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমাটি পুরনো হয়ে যায়নি। সদ্য স্বাধীন দেশের বুকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত এ সিনেমার ৫০ বছর পূর্তির পর এখনো চলচ্চিত্রটিকে মাস্টারপিস বলে আখ্যা দেয়া হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে ‘ওরা ১১ জন’ অনাদিকাল তার গৌরব ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন

বিশেষ সম্মাননা পেলেন বুবলী
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হত্যায় যা বললেন চিত্রনায়ক ওমর সানী
গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা, মানবিক সহায়তার দাবি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির

পরবর্তী সংবাদ

Share this on Facebook Twitter LinkedIn Tumblr

Leave a reply

 


সর্বশেষ