লিখেছেন – রউফুল আলম
একজন মানুষ জীবনে কী করবে, সেটা অবশ্যই তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। তাঁর নিজস্ব চিন্তা-চেতনা। কেউ যদি তবলা বাজাতে চায়, সে তবলা নিয়ে ঘুরবে। কেউ যদি চৌকিদার হতে চায়, তাহলে চৌকিদার হবে। তাতে কারো আপত্তি নেই। তবে কেউ যদি নিজেকে যাচাই না করে, নিজেকে পরখ না করে শুধু একমুখী ঝোঁকে, ঝাঁকের পালের সাথে দৌঁড়ায়—সেটা দুঃখজনক। ছেলে-মেয়েরা যখন নিজের ভিতরের সম্ভাবনাকে যাচাই করতে চায় না, তখন কষ্ট হয়। আমাদের দেশে যে বিসিএস-জ্বর এসেছে, সেখানে সম্ভাবনার খুন হতে আমি দেখেছি। বিসিএস দিয়ে চাকুরি করবে, তাতে দোষের কিছু নেই। দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীরই নিজস্ব গুরুত্ব ও অবদান আছে।
সমস্যা হলো, একজন তরুণ-তরুণী যখন মনে করছে তাঁর সামনে বিসিএস ছাড়া আর কিছু নেই—এটা নিজের জন্য ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। কেউ যখন ভাবছে, তাকে দিয়ে বিসিএস ছাড়া কিছু হবে না—সেটা আত্মঘাতী। বাইশ-তেইশ বছর বয়স, পৃথিবীর সবকিছু বুঝার বয়স নয়। সে বয়সের ছেলে-মেয়েগুলো যখন নিজেকে শুধু একটি গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখে, তাতে সে নিজে বঞ্চিত হয়। সমাজকেও বঞ্চিত করে।
সমাজের সবাই একই কাজ করতে পারে না। একই বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে দৌঁড়াতে পারে না। তাতে সমাজ ভেঙ্গে পড়ে। আঠারো থেকে ত্রিশ হলো গড়ার বয়স। নিজেকে শেইপ দেয়ার বয়স। চ্যালেঞ্জ নেয়ার বয়স। নিজেকে পরখ করার বয়স। নিজেকে দিয়ে কী হবে, কী হবে না—সেটা পরীক্ষা করার বয়স। যে ছেলে-মেয়েটি নিজেকে পরখ না করে, একজন বিসিএস কর্মকর্তা হয়ে রইলো—সে তো জানতেই পারলো না তাকে দিয়ে কী হতো, কী হতো না। একটা দেশের তরুণ-তরুণীদের রাষ্ট্রীয় চ্যালঞ্জ যেমন নিতে হয়, বৈশ্বিক বা গ্লোবাল চ্যালেঞ্জও নিতে হয়। তা না হলে সমাজটা পৃথিবীর মঞ্চে দাঁড়াবে কাদের নিয়ে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের একজন স্টুডেন্ট হয়তো হতে পারতো এস্ট্রনমির অধ্যাপক, কিংবা থিউরেটিক্যাল ফিজিসিস্ট। মেঘনাদ সাহা’র মতো ভাবতে ভাবতে একটি ইকোয়েশন দাঁড় করিয়ে ফেলবে। সে ইকোয়েশেনের সাথে তাঁর নাম জড়িয়ে থাকবে অনাগত কাল। কেমেস্ট্রির একজন শিক্ষার্থী হয়তো কাজ করতে পারতো প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফ্রিক রিসার্চ সেন্টারে। হয়তো উদ্ভাবন করতে পারতো নতুন কোন ম্যাটেরিয়ালস কিংবা ড্রাগ মলিকিউল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়তো গবেষণা করতে করতে উদ্ভাবন করতে পারতো নতুন কোন ধান, সবজি কিংবা অন্যান্য শস্য। যে তরুণ ডাক্তার বিসিএস দিয়ে সার্জন হয়ে বসে আছে, সে হয়তো গবেষণা করতে পারতো স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ব্যাকম্যান রিসার্চ সেন্টারে। সে কাজ করতে পারতো ফাইব্রোটিক ডিজিজ, এলজাইমার কিংবা অন্যান্য রোগ নিয়ে। কিন্তু এঁরাই যখন কায়মনোবাক্যে হাতে জপমালা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিসিএস জপতে থাকে, তখন খুবই করুণা হয়। কষ্ট বোধ করি।
কেউ যদি নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা না করে নিজেকে সঁপে দেয়, তাহলে সে বহুজনকে বঞ্চিত করে। একটা বিশাল পৃথিবী থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে। এটা দুঃখজনক। আমার জীবনে একটি বিসিএস পরীক্ষাই দেয়ার সুযোগ হয়েছিলো। সে পরীক্ষার লিখিত পর্ব দিয়ে আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিলো। বিদেশে আসার পর ফল বের হলো। লিখিত পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। সে ফলাফল পেয়ে খুব দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরে বুঝলাম, এই যে পৃথিবীকে দেখার এবং জানার সৌভাগ্য হয়েছে—নিজেকে যাচাই না করলে কোনদিনই উন্মোচন করতে পারতাম না। নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম নতুন পৃথিবীতে। যেখানে নিত্যদিনের সাথীরা হলেন, কালের সবচেয়ে আলোকিত মানুষ। এই গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় নিজেকে জড়িয়ে বুঝেছি, এখানে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে তেমনি আনন্দ এবং অর্জনের ব্যাপ্তিটাও অনেক বড়ো।
সঁপে দেয়ার আগে, নিজেকে পরীক্ষা করো, প্লিজ! তুমি যে যেতে পারো বহুদূর, সেটা তোমাকেই পরখ করতে হবে। ঝাঁকের সাথে দৌঁড়ে নিজের বৃহত্তর সম্ভাবনাটুকু খুন করো না।
……….
ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
Source
Top comments(0)
For further actions, you may consider blocking this person and/orreporting abuse
Read next

VACE: Breakthrough AI System Combines Video Creation and Editing in Single Unified Model
Mike Young -

New AI Video Captioning System Combines Synthetic and Human Data for 31.5% Better Results
Mike Young -

AI Models Often Fake Their Step-by-Step Reasoning, Study Shows
Mike Young -

A Beginner’s Guide to HTTP and REST Services
Beatris Ilieva -