রাজধানী শহর বা শুধুরাজধানী হলো সেইপৌরসভা, যা একটিদেশ,রাষ্ট্র,প্রদেশ,বিভাগ অথবা অন্যান্যউপ-জাতীয় বিভাগের প্রধান মর্যাদাপ্রাপ্ত কেন্দ্র, যা সাধারণতসরকারের আসন হিসেবে কাজ করে। রাজধানী সাধারণত একটিশহর, যেখানে সরকারের দপ্তর ও বৈঠকের স্থানগুলি অবস্থিত থাকে; আইন বাসংবিধান দ্বারা রাজধানীর মর্যাদা নির্ধারিত হয়। কিছু আইনব্যবস্থায়, একাধিক শাখা সরকারের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত থাকে, যার ফলে একাধিক আনুষ্ঠানিক রাজধানী হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, আনুষ্ঠানিক (সংবিধানিক) রাজধানী ও সরকারের আসনের মধ্যে পার্থক্য থাকে, যেখানে সরকারের আসন থাকেঅন্য স্থানে।
রাজধানী শব্দের ইংরেজি ক্যাপিটাল শব্দটিলাতিন ক্যাপিট থেকে এসেছ যার অর্থ হল 'প্রধান'। এছাড়াওইংরেজি ক্যাপিটাল শব্দটি আরো বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বাংলায় রাজধানী বলতে কোনও দেশ বা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শহরকেই বোঝানো হয়ে থাকে। রাজধানী হতে হলে কোনও শহরকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর না হলেও চলে, কিন্তু রাষ্ট্রটির সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম উক্ত শহরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।
ঐতিহাসিকভাবে কোনও রাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক শহরটি সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং দেশের প্রায় সকল অংশই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল উক্ত শহরের উপর নির্ভরশীল থাকে। যেমন, প্রাচীনবাগদাদ, প্রাচীন এথেন্স ও লন্ডনসহ বিভিন্ন শহর ছিল সংশ্লিষ্ট দেশগুলির তৎকালীন অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। তাই এ'সব শহরেই সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত ছিল।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষমতার মিলন সবসময় ঘটে না। ঐতিহ্যবাহী রাজধানী অনেক সময় প্রাদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে ছাপিয়ে যায়, যেমননানজিং বনামসাংহাই,ক্যুবেক সিটি বনামমন্ট্রিয়ল, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী। কোনো রাজবংশ বা সভ্যতারপতন ঘটলে রাজধানী শহরও বিলুপ্ত হতে পারে, যেমনটি ঘটেছিল ব্যাবিলন[১২] ওকাহোকিয়া। প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে "রাজনৈতিক যাযাবরত্ব" চর্চা করা হতো, যাতে শাসক ও প্রজাদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হয়।[১৩]
যদিও অনেক রাজধানী সংবিধান বা আইন দ্বারা নির্ধারিত, বহু পুরনো রাজধানীর কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই, যেমনবার্ন,এডিনবার্গ,লিসবন,লন্ডন,প্যারিস এবংওয়েলিংটন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এসব শহরকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় প্রচলিত রীতি অনুসারে, কারণ দেশটির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় সব বা অধিকাংশ, যেমন সরকারি দপ্তর, সুপ্রিম কোর্ট, আইনসভা, দূতাবাস ইত্যাদি সেখানে অবস্থিত।
অনেক আধুনিক রাজধানী শহর দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত, যাতে দেশের জনসংখ্যার জন্য সহজে পৌঁছানো যায় এবং সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে ভালোভাবে রক্ষা করা যায়।(এছাড়াও দেখুন§সামরিক কৌশলে রাজধানী) রাজধানীর অবস্থান কখনও কখনও দুই বা ততোধিক শহর বা রাজনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সমঝোতার ফলেও নির্ধারিত হয়, আবার ইতিহাসজনিত কারণেও হতে পারে, কিংবা যথেষ্ট জমি প্রয়োজন হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে নতুনপরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা হয়।[১৪] অধিকাংশ জাতীয় রাজধানীই তাদের দেশের বৃহত্তম শহর। আধুনিক উদাহরণ হিসেবে রয়েছেবার্লিন,কায়রো,লন্ডন,মাদ্রিদ,মেক্সিকো সিটি,মস্কো,প্যারিস,রোম,জাকার্তা,মেট্রো ম্যানিলা,সিউল এবংটোকিও।[১৫]
যুক্তরাজ্য-এরকাউন্টিগুলিতে ঐতিহাসিক কাউন্টি শহর রয়েছে, যা প্রায়ই কাউন্টির বৃহত্তম শহর নয় এবং অনেক সময় আর প্রশাসনিক কেন্দ্রও নয়, কারণ অনেক ঐতিহাসিক কাউন্টি বর্তমানে কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যমান, এবং প্রশাসনিক সীমানা আলাদা।পুনর্জাগরণ যুগ থেকে, বিশেষ করে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ফলে, বিশ্বের নতুন রাজধানীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৬]
প্রশাসনিক সংস্থা কখনও কখনও পরিকল্পিতভাবে নতুন রাজধানী শহর গড়ে তোলে, যা হবেরাষ্ট্র বা এর কোনো উপবিভাগের প্রশাসনিক কেন্দ্র। ইচ্ছাকৃতভাবেপরিকল্পিত ও নকশাকৃত রাজধানী শহরের উদাহরণসমূহ:
একটি ইচ্ছাকৃতভাবেপরিকল্পিত শহর, যা মূলজনবসতি কেন্দ্র-এ অবস্থিত পূর্ববর্তী রাজধানীর পরিবর্তে নির্মিত হয়েছে। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ বা উত্তম আবহাওয়ার অঞ্চলে রাজধানী স্থাপন।
এমন একটি শহর যা দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী শহরের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে।
জাতীয় রাজধানী: ১৯৭৬ সালের ২৪ জুন জারি হওয়া প্রেসিডেন্টিয়াল ডিক্রি নং ৯৪০ অনুযায়ীজাতীয় রাজধানী অঞ্চলকে সরকারের আসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবংম্যানিলা শহরকে দেশের রাজধানী করা হয়। কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে, আবার কিছু মেট্রোপলিটন এলাকার অন্যত্র অবস্থিত।মালাকানিয়াং প্রাসাদ ওফিলিপাইনের সুপ্রিম কোর্ট রাজধানীতে, তবে সংসদের দুই কক্ষ রাজধানীর বাইরে কিন্তু একই মহানগর এলাকায় অবস্থিত।
জাতীয় রাজধানী:পর্তুগালের সংবিধানে রাজধানীর উল্লেখ নেই। যদিওলিসবন সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সরকারি দপ্তর, দূতাবাস ও উচ্চ আদালতের আসন, তবুও কোনো সরকারি নথিতে এটি রাজধানী হিসেবে উল্লেখ নেই।
ইসরায়েল ওপ্যালেস্টাইন: উভয়েইজেরুজালেমকে রাজধানী দাবি করে। ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সরকার, সংসদ (কনেসেট) ও সুপ্রিম কোর্ট জেরুজালেমে অবস্থিত; প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের রাজধানী কার্যতরামাল্লা।
যুদ্ধে রাজধানী দখল শত্রুর সরকার পতনের সম্ভাবনা বাড়ায়। চীনের ইতিহাসে রাজধানী পতনের সাথে রাজবংশ পতনের নজির আছে। ইউরোপে বিকেন্দ্রীকৃত ক্ষমতার কারণে রাজধানী দখল সবসময় সিদ্ধান্তমূলক ছিল না, তবেফ্রান্সের মতো কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রে তা ছিল।
আন্ড্রেয়াস দাউম, "আধুনিক ইতিহাসে রাজধানী: জাতির জন্য নগর স্থান সৃষ্টি",বার্লিন – ওয়াশিংটন, ১৮০০–২০০০: রাজধানী শহর, সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, ও জাতীয় পরিচয়, সম্পাদনা: আন্দ্রেয়াস দাউম ও ক্রিস্টফ মাউচ, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৬, পৃ.৩–২৮।
ক্যাপিটাল সিটিজ: ইন্টারন্যাশনাল পার্সপেক্টিভস – লেস ক্যাপিটালেস: পার্সপেক্টিভস ইন্টারন্যাশনাল, সম্পাদনা: জন টেলর, জিন জি. ল্যাংলেল এবং ক্যারোলিন অ্যান্ড্রু। অটোয়া: কার্লেটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৩,আইএসবিএন৯৭৮-০-৭৭৩৫-৮৪৯৬-৯।
↑"Capital"।Merriam-Webster (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০২৪।
↑Ovidius Naso, Publius (২০০৩)।Amores। Bishop, Tom কর্তৃক অনূদিত। Taylor & Francis।আইএসবিএন০৪১৫৯৬৭৪১৪।
↑Beretta, Silvio (২০১৭)।Understanding China Today: An Exploration of Politics, Economics, Society, and International Relations। Springer। পৃ.৩২০।আইএসবিএন৯৭৮৩৩১৯২৯৬২৫৮।
↑Bahr, Ann Marie B. (২০০৯)।Christianity: Religions of the World। Infobase Publishing। পৃ.১৩৯।আইএসবিএন৯৭৮১৪৩৮১০৬৩৯৭।
↑D'Agostino, Peter R. (২০০৫)।Rome in America: Transnational Catholic Ideology from the Risorgimento to Fascism। Univ of North Carolina Press।আইএসবিএন৯৭৮০৮০৭৮৬৩৪১১।
↑বার্লিন – ওয়াশিংটন, ১৮০০–২০০০: রাজধানী শহর, সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা এবং জাতীয় পরিচয়, সম্পা.আন্দ্রেয়াস ডাউম এবং ক্রিস্টফ মাউখ। নিউ ইয়র্ক: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৬,আইএসবিএন৯৭৮-০-৫২১-৮৪১১৭-৭, পৃ. ৪–৭।