চতুর্দশ শতাব্দী হতে ১৮১২ সাল পর্যন্ত মলদোভার অধিকাংশ অঞ্চলমলদাভিয়া রাজ্যের অংশ ছিল। তারপর, ১৮১২ সালে উক্ত রাজ্যউসমানীয় সাম্রাজ্যে (যার নিকট মলদাভিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্র ছিল)রুশ সাম্রাজ্যের নিকট হস্তান্তর করে এবং রাজ্যটি বেসারাবিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৫৬ সালে, দক্ষিণ বেসারাবিয়া পুনরায় মলদাভিয়ার অংশ হয়, যার সাথে তিন বছর পর ওয়ালাকিয়া একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে রোমানিয়া গঠিত হয়। কিন্তু, ১৮৭৮ সালে পুরো অঞ্চল আবার রুশ শাসনাধীনে চলে যায়। ১৯১৭ সালেররুশ বিপ্লবের সময় বেসারাবিয়া রুশ প্রজাতন্ত্রের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেটি মলদাভিয়া গণপ্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মলদাভিয়া গণপ্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তারপর ঐ একই বছরে দেশটি বিধানসভার ভোটের পর রোমানিয়ার সাথে একীভূত হয়। সিদ্ধান্তটিসোভিয়েত রাশিয়া বিরোধিতা করেছিল। পরবর্তিতে ১৯২৪ সালে সোভিয়েত রাশিয়া বেসারাবিয়ার পূর্বে অবস্থিত মলদোভান-অধ্যুষিত অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে মলদাভিয়ান অটোনোমাস রিপাবলিক (এমএএসএসআর) প্রতিষ্ঠা করে, যেটি ইউক্রেনীয় এস.এস.আর -এর অন্তর্গত ছিল।
১৯৪০ সালে মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তির ফলে রোমানিয়া বেসারাবিয়া এবং উত্তর বুকোভিনাকেসোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ফলস্বরূপ, মলদাভিয়ান সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিক (মলদাভিয়ান এস.এস.আর) গঠিত হয়, যার মধ্যে বেসারাবিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল এবং সাবেক এম.এ.এস.এস.আর এর সর্বপশ্চিমের সংকীর্ণ এলাকা (নিস্টার নদীর পূর্বে) অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালের ২৭শে আগস্টেসোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন চলাকালীন অবস্থায় মলদাভিয়ান এস.এস.আর স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং মলদোভা নাম ধারণ করে।[১৭] মলদোভার সংবিধান ১৯৯৪ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০ সাল থেকে নিস্টার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত মলদোভার সংকীর্ণ এলাকাটিট্রান্সনিস্ট্রিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারেরকার্যত নিয়ন্ত্রণে আছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন পরবর্তী শিল্প ও কৃষি উৎপাদন হ্রাসের দরুণসেবা খাত মলদোভার অর্থনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করছে এবং দেশেরজিডিপির ৬০ শতাংশের বেশি আসে উক্ত খাত থেকে। মাথাপিছু জিডিপিতে দেশটি ইউরোপের দ্বিতীয় দরিদ্রতম রাষ্ট্র।[১৮] মলদোভামানব উন্নয়ন সূচকের দিক থেকে ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ও বিশ্বের মধ্যে ৯০ তম স্থানে রয়েছে।
মলদোভা একটিসংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক রাষ্ট্র যেখানে রাষ্ট্রপতিরাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান। এটিজাতিসংঘ,কাউন্সিল অব ইউরোপ,বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউ.টি.ও), অরগানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ও.এস.সি.ই), গুয়াম অরগানাইজেশন ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ,স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথ (সি.আই.এস), অর্গানাইজেশন অব দি ব্ল্যাক সি ইকোনমিক কোঅপারেশন (বি.এস.ই.সি), এবং অ্যাসোসিয়েশন ট্রাওর সদস্য রাষ্ট্র।
মলদোভা নামটি মলদোভা নদীর নাম থেকে এসেছে; ১৩৫৯ সালে মলদাভিয়া রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময় নদীটির উপত্যকা রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল।[১৯] কিন্তু, নদীর নামের উৎপত্তি অজানাই রয়ে গেছে। মলদাভিয়ান ইতিহাসবিদ দিমিত্রিয়া কান্তেমির এবং গ্রিগোরে উরেকের বর্ণনা অনুযায়ী, রাজকুমার ড্রাগোস নদীটির নামকরণ করেছিলেন অরোক্স নামক ষাঁড় শিকার করার পর: শিকারের সময় তাড়া করার পর মলদা (সেভা) নামক রাজকুমারের ক্লান্ত শিকারী কুকুর নদীতে ডুবে যায়। অতঃপর, কুকুরটির নাম অনুসারে নদী থেকে শুরু করে রাজ্যের পর্যন্ত নামকরণ করা হয়।[২০]
মলদোভার প্রাগৈতিহাসিক কালের সূচনা হয় উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে যখন প্রায় ৪৪,০০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে হোমো সেপিয়েন্সের (মানুষেরবৈজ্ঞানিক নাম) উপস্থিতি দেখা যায়। তারপর, যখনগ্রীসেধ্রুপদী সভ্যতায় প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায়, সেই সময় পর্যন্ত প্রাগৈতিহাসিক কাল স্থায়ী হয়।
২০১০ সালে এন.কে আনিসজুটকিন বায়রাকিতে ৮,০০,০০০-১.২ মিলিয়ন বছরের পুরাতন ওল্ডোয়ান নামক চকমকে পাথরের যন্ত্র আবিষ্কার করেন।[২২]নব্য প্রস্তর যুগে মলদোভার ভূখণ্ডের অবস্থান বৃহৎ কুকুটেনি-ট্রিপিলিয়া সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যে সংস্কৃতির ব্যাপ্তি পূর্ব দিকে ইউক্রেনে নিস্টার নদী থেকে অনেক দূর এবং পশ্চিম দিকে রোমানিয়ায়কার্পেথীয় পর্বতমালা থেকে অনেক দূর পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। এই সভ্যতা আনুমানিকভাবে খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০০ সাল থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৭৫০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই সভ্যতার অধিবাসীরা কৃষিকাজ, পশুপালন, শিকার এবং জটিল নকশার মৃৎপাত্র তৈরি করত।[২৩]
কার্পিয়ান উপজাতির মানুষজনধ্রুপদী সভ্যতার আমলে মলদোভা ভূখণ্ডে বসবাস করত। খ্রিস্টাব্দ প্রথম থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মলদোভার দক্ষিণাংশরোমান সাম্রাজ্য এবং পরবর্তীতেবাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যকার রুটে অবস্থিত মলদোভা ভূখণ্ডটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এজন্য, প্রাচীনযুগের শেষভাগে এবং প্রাথমিক মধ্যযুগে উক্ত ভূখণ্ড নানা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। আক্রমণকারীদের মধ্যে গথ, হুন, আভার, বুলগার, ম্যাগায়ার, পেচেনেগস, কুমান, মঙ্গোল এবং তাতার জাতি উল্লেখযোগ্য।
একাদশ শতাব্দীতে 'রডফোস' নামের একজনভাইকিং সম্ভবত দেশটির ভূখণ্ডে ব্লাকুমেনদের দ্বারা নিহত হয়েছিল যারা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।[২৪] ১১৬৪ সালে ভাবীবাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম এন্ড্রোনিকোস কমনিনোস হ্যালিচ রাজ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে ভ্লাকরা তাকে সম্ভবত মলদোভার ভুখণ্ডে বন্দী করে।
পূর্ব স্লাভিক হাইপেশিয়ান ইতিহাসে ত্রয়োদশ শতাব্দীর বোলোহোভেনির উল্লেখ আছে। ইতিহাসে এটাও বলা আছে যে, বোলোহোভেনির ভূখণ্ডের সাথে হ্যালিচ, ভোলহিনিয়া এবংকিয়েভ রাজ্যেগুলির সীমান্ত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে ১৩ শতকের এই অঞ্চলের সুরক্ষিত বসতিগুলোর অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। আলেকজান্দ্রু ভি. বোলডুর নিস্ট্রু/নিস্টার এবং নিপ্রু/নিপার নদীর মধ্যবর্তী অংশে ভস্কোদাভি, ভস্কোদাভটি, ভলোস্কোভটি, ভলকোভটি, ভলোসোভকা এবং তাদের অন্যান্য শহর ও গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করেছেন।[২৫] ১২৫৭ সালে ড্যানিয়েল অফ গ্যালিসিয়ার সৈন্যদের কাছে বোলোহোভেনির পরাজয়ের পর বোলোহোভেনির নাম ইতিহাস থেকে মুছে যায়।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ব্রডনিকরা হ্যালিচের সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণাধীন স্লাভিক-ভ্লাক রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলজুড়ে বসবাস করত। (1216 সালের দিকে সুজডাল রাজ্যর সেবাকর্মে ব্রডনিকদের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে)।
মলদাভিয়া রাজ্য এবং মলদোভা, ইউক্রেন এবং রোমানিয়ার আধুনিক সীমানা
যখন 'ড্রাগোস' নামের একজন ভ্লাক ভয়ভোড (সেনাপতি) মলদোভা নদীবর্তি অঞ্চলে এসেছিলেন, তখন থেকেই মলদাভিয়া রাজ্যের সূচনা হয়। মারামুরেস থেকে তার লোকেরা তার দেখাদেখি ঐ অঞ্চলে আসতে থাকে।১৩৫০ এর দশকে ড্রাগোস একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন যা হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে ছিল। মলদাভিয়া রাজ্যের স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হয় যখন মারামুরেসের আরেক ভ্লাক সেনাপতি প্রথম বোগদান ১৩৫৯ সালেকার্পেথীয় পর্বতমালা অতিক্রম করেছিলেন এবং হাঙ্গেরির রাজার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে হাঙ্গেরির থেকে মলদাভিয়া দখল করার মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। তৎকালীন মলদাভিয়া রাজ্য পশ্চিমেকার্পেথীয় পর্বতমালা, পূর্বে নিস্টার নদী এবং দক্ষিণে দানিউব নদী এবংকৃষ্ণ সাগর দিয়ে ঘেরা ছিল। রাজ্যটির ভূখণ্ডের মধ্যে বর্তমান মলদোভা ভূখণ্ড, রোমানিয়ার পূর্বে আটটি প্রদেশ এবং বর্তমান ইউক্রেনের চেরনিভাটস্কা এবং বুজাক অঞ্চলের কিছু অংশ ছিল। তখনকার স্থানীয় লোকজন রাজ্যটিকে বর্তমান মলদোভা প্রজাতন্ত্র এবং রোমানিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মতো মলদোভা নামেই চিনত।
মলদোভার ইতিহাসের সঙ্গে পোল্যান্ডের বহু শতাব্দীর ইতিহাসের দারুণ সংযোগ রয়েছে। পোলিশ ঐতিহাসিক ইয়ান ডুগোশের মতে, মলদাভিয়ানরা (ওয়ালাকিয়ান নামে) ১৩৪২ সালে রাজা প্রথম লাডিস্লসের অধীনে ব্রান্ডেনবুর্গের মার্গ্রেভিয়েটের (শাসক) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যোগ দিয়েছিল।[২৬] তখনকার পোলিশ রাজ্য হাঙ্গেরিয়ান রাজ্যকে মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এই হাঙ্গেরিয়ান রাজ্য ভবিষ্যতে মলদোভা হবে এরকম অঞ্চলকে রাজনৈতিকভাবে নিজেদের আয়ত্তে আনতে বরাবরের মত আগ্রহী ছিল।
মারামুরেসের ভ্লাক সেনাপতি কুহিয়ার বোগদান মলদাভিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেপোল্যান্ড এবং মলদাভিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক আরও প্রসারিত হয়। উক্ত সেনাপতি হাঙ্গেরির রাজার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিলেন। ১৩৫৯ সালেকার্পেথীয় পর্বতমালা অতিক্রম করে এই সেনাপতি মলদাভিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেন এবং মলদাভিয়াকে স্বাধীন করে তুলতে সফল হন। অ্যাঞ্জেভিন পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির (হাঙ্গেরি তখনও দেশটির শাসনে ছিল) সংক্ষিপ্ত ইউনিয়নের অনুকূলে না থাকলেও, বোগদানের উত্তরসূরি মলদাভিয়ার শাসক লাৎস্কু সম্ভবতপোলদের সাথে মিত্রতা করেছিলেন। লাৎস্কু ১৩৭০ সালের দিকেরোমান ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়াকে মঞ্জুরও করেছিলেন, কিন্তু তার ইঙ্গিত ছিল কোনো পরিণতি ছাড়া অপরিবর্তিত থাকা।
পোলিশ-হাঙ্গেরিয়ান ইউনিয়নের অবসানে প্রথম পেট্রু অনেক লাভবান হন এবং দেশটিকে ইয়াগিলোন রাজ্যের কাছাকাছি নিয়ে যান। তারপর, তিনি ১৩৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ডের রাজা ইয়োগাইলার অধীনে চলে যান। এসব কিছুর পরিণতি অনাকাঙ্ক্ষিত হবারই ছিল। পেট্রু পোলিশ শাসককে টিউটনিক নাইটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করেছিলেন এবং ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে পোকুট্টিয়ার উপর শাসনভার দেওয়া হয়েছিল; রেকর্ড মতে, এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি বিধায় এই অঞ্চলটি নিয়ে দুটি রাজ্যের মধ্যে বিবাদ লাগতে থাকে, যতক্ষণ না ১৫৩১ সালে ওবার্টিনের যুদ্ধে অঞ্চলটি মলদাভিয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। রাজকুমার পেট্রু তার শাসনকে দক্ষিণে দানিউব ডেল্টাতে সম্প্রসারিত করেছিলেন। তার ভাই প্রথম রোমান ১৩৯২ সালে হাঙ্গেরি শাসিত চেতাতা আলবা জয় করেন ও মলদাভিয়ার জন্যকৃষ্ণ সাগরে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করেন। অতঃপর, লিথুয়ানিয়ার ভিটৌটাস দি গ্রেটের সাথে তার বিরোধে ফায়োদর কোরিয়াতোভিচকে সমর্থন করার জন্য সিংহাসনচ্যুত হন। প্রথম স্টিফেনের অধীনে হাঙ্গেরির সিগিসমুন্ড ক্রমবর্ধমান পোলিশ প্রভাবের বিরোধিতা করেছিল, যার অভিযান ১৩৮৫ সালে গিন্দাওয়ানিতে ব্যর্থ হয়েছিল। যাইহোক, স্টিফেন রহস্যজনক পরিস্থিতিতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়।
যদিও প্রথম আলেকজান্ডারকে ১৪০০ সালে হাঙ্গেরিয়ানরা ক্ষমতায় এনেছিল (প্রথম মির্চা অফ ওয়ালাকিয়ার সহায়তায়), এই শাসক পরে পোল্যান্ডের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে (উল্লেখ্যভাবে গ্রুনভাল্ডের যুদ্ধে এবং মারিয়েনবুর্গের অবরোধে পোলিশদের পক্ষে মলদাভিয়ান বাহিনীকে সামিল করেছিলেন)। এছাড়াও, ওয়ালাকিয়াতে তার নিজের পছন্দমত শাসকদের ক্ষমতায় বসাতেন। তার রাজত্ব মলদাভিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সফল রাজত্ব ছিল।
প্রথম আলেকজান্ডারের সমস্ত সাফল্যের জন্য উসমানীয় তুর্কিদের সাথে ১৪২০ সনে চেতাতা আলবাতে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রথম আলেকজান্ডারের দীর্ঘ শাসনামল মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত ছিল। তার উত্তরসূরিরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল যা দেশকে বিভক্ত করেছিল দ্বিতীয় বোগদানের হত্যা এবং ১৪৫১ সালে তৃতীয় পিটার অ্যারনের সিংহাসনে বসার আগ পর্যন্ত। তারপরও, মলদাভিয়া ঐ ঘটনার পর হাঙ্গেরিয়ান হস্তক্ষেপের শিকার হয় কেননা ম্যাথিয়াস কোরনিভাস অ্যারনকে সিংহাসনচ্যুত করেছিল এবং সুচেভার সিংহাসনে আলেকজান্দ্রেলের আরোহণকে সমর্থন করেছিল। পেট্রু অ্যারনের শাসনের মাধ্যমে মলদাভিয়ারউসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে মিত্রতার সূচনা হয় কারণ উক্ত শাসক সুলতানদ্বিতীয় মেহমেদকে আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে সম্পদ প্রদানে সম্মত হন।
এই সময়ে ক্রিমিয়ানতাতার এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে তুর্কিদের দ্বারা মলদাভিয়া বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। ১৫৩৮ সনে রাজ্যটিউসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে, কিন্তু রাজ্যটির অভ্যন্তরীণ এবং আংশিকভাবে বাহ্যিক স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণ্ন ছিল।[২৮] তারপরও, পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথ মলদাভিয়াকে জাতীয় রাজনীতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে মলদাভিয়ান আভিজাত্য এবং পোলিশ স্লাখতার (আভিজাত্য) মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করতে থাকে। ১৬০০ সালের মে মাসে মাইকেল দি ব্রেভ যখন বাকাউ যুদ্ধে জয়লাভ করে ইয়েরেমিয়া মোভিলাকে মলদাভিয়ার সিংহাসন হতে ক্ষমতাচ্যুত করে মলদাভিয়া, ওয়ালাকিয়া এবং ট্রান্সিলভেনিয়াকে পুনরায় একত্রিত করেন, তখন ইয়ান জামোয়িস্কির নেতৃত্বে পোলিশ সৈন্যবাহিনী মলদাভিয়া হতে ওয়ালাকিয়ানদের বিতাড়িত করে। জামোয়িস্কি ইয়েরেমিয়া মোভিলাকে পুনরায় সিংহাসনে বসায় ও মোভিলা দেশটিকে পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথের অধীনে রেখেছিল। মলদাভিয়া অবশেষে ১৬২১ সালে উসমানীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে ফিরে যায়।
যদিও ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি রাজনৈতিকভাবে মলদাভিয়া রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানকার বিশাল এলাকা মলদাভিয়ান বোয়ার (উচ্চ পদস্থ রাজ কর্মকর্তা) বা মলদাভিয়ান শাসকদের মালিকানায় ছিল। নিস্টার নদীর দূরবর্তী জমিগুলোর সবচেয়ে পুরাতন যেসব দলিলসমূহ রয়েছে, সেগুলো ১৬ শতকের।[২৯][পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মলদাভিয়ান ইতিহাসবিদ গ্রিগোরে উরেকে উল্লেখ করেন যে, ১৫৮৪ সনে পোল্যান্ড রাজ্যের নিস্টার নদীর দূরবর্তী কিছু মলদাভিয়ান গ্রামগুলোতে কসাকরা আক্রমণ এবং লুটপাট করেছিল।[৩০][অ-প্রাথমিক উৎস প্রয়োজন] অনেক মলদাভিয়ানরা কসাকস ইউনিটের সদস্য ছিল, তাদের মধ্যে দুজন হল- ইওয়ান পটকোয়াভা এবং দানিলা অ্যাপোস্টল যারা ইউক্রেনের হেটম্যান (রাজনৈতিক উপাধি) হয়েছিল। মলদাভিয়ান শাসক ভাসিলে লুপুর কন্যা রুক্সান্ড্রা লুপু তিমিশ খমেলনিটস্কিকে বিবাহ করেছিল ও ইউক্রেনীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী রাশকোভে থাকত।
যদিও আজকের মলদোভার অধিকাংশই ষোড়শ শতাব্দীতে উসমানীয় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল, ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথের অংশ ছিল ১৭৯৩ সালে সংঘটিত পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাজনের আগ পর্যন্ত।
১৮১২ সনের বুখারেস্ট চুক্তির পর মলদাভিয়া ভূখণ্ডের পরিবর্তন।
মলদাভিয়ার অভিজাত শ্রেণীর মানুষদের তাদের রাজ্যের সার্বভৌমত্বের পক্ষে অনেক প্রতিবাদ সত্ত্বেও, ১৮১২ সালেরবুখারেস্ট চুক্তি মোতাবেকউসমানীয় সাম্রাজ্য (মলদাভিয়া যার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল) রাজ্যটির ভূখণ্ডের পূর্বভাগের অর্ধেকরুশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তর করে। সেই সাথে রাশিয়া কর্তৃক আগে থেকে দখল করা খোটিন এবং সাবেক বেসারাবিয়া (বর্তমানে বুজাক) হস্তান্তর করা হয়। নতুন রুশ প্রদেশটিকে 'ওব্লাস্ট অফ মলদাভিয়া অ্যান্ড বেসারাবিয়া' বলা হত এবং প্রদেশটি প্রথমদিকে ব্যাপক মাত্রায় স্বায়ত্তশাসনের সুবিধা পেয়েছিল। ১৮২৮ সনের পরে এই স্বায়ত্তশাসন ক্রমান্বয়ে সীমিত করা হয় এবং ১৮৭১ সালে রাষ্ট্র দ্বারা আরোপিত আত্তীকরণ প্রক্রিয়ায় (রাশিফিকেশন প্রক্রিয়া) প্রদেশটিকে বেসারাবিয়া গভর্নরেটে পরিণত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেসারাবিয়াতে জার প্রশাসন আস্তে আস্তে প্রাতিষ্ঠানিক এবং ধর্মীয় কাজেরোমানীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।[৩১]
প্যারিস চুক্তির (১৮৫৬) মাধ্যমে বেসারাবিয়ার দক্ষিণ অংশ (পরবর্তিতে কাহুল, বোলগ্রাদ এবং ইসমাইল প্রদেশে ভাগ হয়) মলদাভিয়ার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য ছিল এবং ১৮৫৯ সালে ওয়ালাকিয়ার সাথে একত্রিত হয়ে রোমানিয়া গঠন করে। ১৮৭৮ সালে বার্লিন চুক্তির ফলে রোমানিয়া তিনটি প্রদেশকে রুশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে রুশ কর্তৃপক্ষ বেসারাবিয়া বা এর কিছু অংশে রোমানীয় (বুদজাক), রুশ, ইউক্রেনীয়, জার্মান, বুলগেরিয়ান, পোল এবং গাগাউজদেরউপনিবেশ স্থাপনে উৎসাহিত করেছিল। প্রথমদিকে, তুর্কি এবং নোগাইতাতাররা অঞ্চলটির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল খালি করেছিল। পরে ১৭৭০ এবং ১৭৮০ এর দশকে রুশ-তুর্কি যুদ্ধের সময় নোগাইতাতারদের বিতাড়িত করা হয়েছিল ;[৩২][৩৩][৩৪][৩৫] 'পেইল অফ সেটেলমেন্টে' প্রদেশটি যুক্ত করলে অনেক ইহুদিরা অভিবাসনের সুযোগ পেয়ে যায়।[গ] জনসংখ্যায় রোমানীয়দের অনুপাত ১৮১৬ সালে আনুমানিক ৮৬% থেকে হ্রাস পেয়ে[৩৭][৩৮] ১৯০৫ সালে প্রায় ৫২% এ নেমে যায়। এই সময়ে ইহুদি-বিরোধী দাঙ্গা হয়, যার ফলে হাজার হাজার ইহুদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।[৩৯]
১৯২০ এবং ১৯৪০ এর মধ্যে বৃহত্তর রোমানিয়ার মানচিত্র।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক (জাতিগত) সচেতনতা বৃদ্ধি করেছিল, কারণ ১৯১৭ সালে সংগঠিতরুশ সেনাবাহিনীতে ৩০০,০০০ বেসারাবিয়ানকে নিযুক্ত করা হয়েছিল; বড় ইউনিটগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি "মলদাভিয়ান সোলজার্স কমিটি" গঠিত হয়েছিল।১৯১৭ সনের রুশ বিপ্লবের পর বেসারাবিয়ান সংসদ 'স্ফাতুল সারি' (জাতীয় কাউন্সিল) ১৯১৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নির্বাচিত হয় এবং ১৯১৭ সালের[পুরোনো শৈলীতে ২১ নভেম্বর] ৩ ডিসেম্বরেএর কার্যক্রম শুরু হয়। 'স্ফাতুল সারি' রুশ ফেডারেল রাস্ট্রের মধ্যেই 'মলদাভিয়ান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' ঘোষণা করে (১৫ ডিসেম্বর[পুরোনো শৈলীতে ২ ডিসেম্বর] ১৯১৭) এবং সরকার গঠন করে (২১ ডিসেম্বর[পুরোনো শৈলীতে ৮ ডিসেম্বর] ১৯১৭)।
↑"Archived copy"। ১৬ জুন ২০০৬ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০০৬।{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: শিরোনাম হিসাবে আর্কাইভকৃত অনুলিপি (লিঙ্ক)
↑A.V. Boldur,Istoria Basarabiei, Editura V. Frunza, p 111-119
↑Clark, Charles Upson (১৯২৭)।"Bessarabia, Chapter X: The Survival of Roumanian"।Depts.washington.edu। Dodd, Mead & Company। ৯ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৩।Naturally, this system resulted not in acquisition of Russian by the Moldavians, but in their almost complete illiteracy in any language.
↑Charles Upson Clark (১৯২৭)।"Bessarabia, Chapter VIII: Russia Organizes the Province"।Depts.washington.edu। Dodd, Mead & Company। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৩।Today, the Bulgarians form one of the most solid elements in Southern Bessarabia, numbering (with the Gagauzes, i.e., Turkish-speaking Christians also from the Dobrudja) nearly 150,000. Colonization brought in numerous Great Russian peasants, and the Russian bureaucracy imported Russian office-holders and professional men; according to the Romanian estimate of 1920, there were about 75,000 (2.9%) Great Russians in the territory, and the Lipovans and Cossacks numbered 59,000 (2.2%); the Little Russians (Ukrainians) came to 254,000 (9.6%). That, plus about 10,000 Poles, brings the total number of Slavs to 545,000 in a population of 2,631,000, or about one-fifth.
↑(জার্মান ভাষায়) Flavius Solomon,Die Republik Moldau und ihre Minderheiten (Länderlexikon), in: Ethnodoc-Datenbank für Minderheitenforschung in Südostosteuropa, p. 52
↑Ariel Scheib (২৩ জুলাই ১৯৪১)।"Moldova"। Jewishvirtuallibrary.org। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৩।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য<ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ<references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি