ভূগোলের মূল বিষয়বস্তুকে বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের সুবিধার্থে:
- প্রাকৃতিক ভূগোল এবং
- মানবীয় ভূগোল - এই দু'টি শাখায় বিভক্ত করা হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোল হলো ভূগোলের সেই অংশ যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ ও তাদের গাঠনিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি মূলত:অশ্মমণ্ডল,বারিমণ্ডল,বায়ুমণ্ডল,ভূপৃষ্ঠ, এবং বৈশ্বয়িক উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগত (জীবমণ্ডল) নিয়ে গঠিত এবং তাদের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন শাখা গুলো নিম্বরুপ:
- জ্যোতির্বিদ্যা
- ভূতত্ত্ববিদ্যা
- জলবায়ু বিজ্ঞান
- সমুদ্রবিদ্যা
- মৃত্তিকা ভূগোল
- উদ্ভিদবিদ্যা
- প্রাণীভূগোল
- পদার্থবিজ্ঞান
- প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা
ভূত্বকের উপরিভাগের ভৌত পরিবেশ এবং এতে কার্যরত বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ বিজ্ঞানের যে শাখায় সমীক্ষা করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। অধিকাংশ ভূগোলবিদ ভূগোলকে প্রাকৃতিক ও মানবিক নামক দুই শাখায় বিভক্ত করতে আগ্রহী। আবার অনেকে ভূপৃষ্ঠে জীবমণ্ডলের বাস্তুসংস্থানকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয় বিধায় ভূগোলকে প্রাকৃতিক, মানবিক ও জীবভূগোল নামক তিন শাখায় বিভক্ত করে থাকেন। বিগত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, বিষয়বস্তু এবং পঠনপাঠন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুরুতে প্রাকৃতিক ভূগোল বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের (ভূমিবন্ধুরতা, পানি ও বায়ু) অধ্যয়নকে বুঝাতো। যেমন- আর্থার হোমসের (Arther Holmes, 1960) মতে, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের বন্ধুরতা, সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের বিষয়াদি যা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত, তার সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।কার্ল রিটারের (Carl Ritter, 1779-1859) মতে, ‘প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিবেচনা করে।’হার্টশোর্ন বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ।’
এ দিক থেকে বিবেচনা করলে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবল কতিপয় ভূবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের একীভবনই নয়, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকাণ্ডের আন্তঃক্রিয়ার ধরনও পর্যালোচনা করে। ভূগোলের একটি প্রতিষ্ঠিত শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পারিসরিক (spatial) ধরন এবং ভূপৃষ্ঠের পরিবেশের উপাদানগুলোর পারিসরিক সম্পর্ক সমীক্ষা করে। এ ছাড়াও এটি আঞ্চলিক ধরনের সাথে পারিসরিক সম্পর্কের কারণ, একই সাথে পরিবেশের উপাদানগুলোর পরিবর্তনের কারণও ব্যাখ্যা করে থাকে। এ থেকে বলা যায়, ভূমি, বায়ু, পানি এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের সহায়ক যে জীবমণ্ডল, তার বিস্তারিত সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।
প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল (geography)শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রটি ভূগোল জ্ঞানের পুরো শাখাটির মতোই প্রাচীন। চিরায়ত গ্রিক যুগে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে ভূগোলের উৎপত্তি এবং উনবিংশ শতকের শেষভাগে নৃভূগোল (Anthropogeography) বা মানবিক ভূগোলের উৎপত্তির পূর্ব পযর্ন্ত ভূগোল ছিলো মূলত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান : অবস্থানের সমীক্ষা ও জ্ঞাত পৃথিবীর সকল স্থানের ধারাবাহিক বর্ণনা।
প্রাচীন ভারতে ভূগোল তথা ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় বেদ ও প্রাচীনপুরাণে। বেদ-এর লিখিত-রচনা কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের দ্বিতীয় ভাগ।অথর্ববেদ-এ প্রাচীন পুরাণ-এর উৎস সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। বিদ্বজ্জনদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ - ১০০০ অব্দে অথর্ববেদ এর স্তোত্র গুলি রচিত হয়েছিল। প্রাচীন পুরাণের রচয়িতাগণ পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশীয় দ্বীপে ভাগ করেছিলেন - জম্বু দ্বীপ, ক্রৌঞ্চ দ্বীপ, কুশ দ্বীপ, প্লক্ষ দ্বীপ, পুষ্কর দ্বীপ, শক দ্বীপ ও শাল্মলী দ্বীপ ও সেই সব দ্বীপের জলবায়ু আর ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দিয়েছিলেন।বরাহমিহির পৃথিবীতে জল-এর সৃষ্টি, মেঘ ও বৃষ্টিপাত, মহাজাগতিক গ্রহ সম্পর্কিত বস্তু সমূহের অবস্থান আর সঞ্চারণ পথ সম্পর্কে লিখেছিলেন। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদআর্যভট্ট সেই সময়ে পৃথিবীর পরিধি ২৪৮৩৫ মাইল গণনা করেছিলেন যা প্রকৃত পরিধি থেকে ০.২ % কম ছিল।
প্রাচীনচীনে ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে। ভৌগোলিক মানচিত্র গঠিত হত তৎকালীন সাম্রাজ্য সমূহের অবস্থান ও বিস্তৃতি, নদী অববাহিকা, নদীপথ ও বাণিজ্য পথের অবস্থান ইত্যাদি সহ। শুই জিং নামে তৃতীয় শতকের এক অজ্ঞাতনামা লেখকের একটি বই পাওয়া গেছে যেখানে চীনের ১৩৭ টি নদীর তৎকালীন বিবরণ পাওয়া যায়।
জিয়া ড্যানের (৭৩০-৮০৫ খ্রি.) মতো চীনা ভৌগোলিকের বিভিন্ন বৈদেশিক অঞ্চলের যথাযথ বর্ণনায় সমুদ্রপথে পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথের বিবরণ ও মধ্যযুগীয় ইরানীদের দ্বারা সৃষ্ট সমুদ্রমধ্যে আলংকারিক স্তম্ভের কথা আছে যেগুলো আসলে জাহাজদের পথ দেখানোর বাতিঘর ছিল।
নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সোঙ সাম্রাজ্য এবং ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত মিঙ সাম্রাজ্যের আমলে নিয়মানুগ ভৌগোলিক চর্চা সম্পর্কে জানা যায়। সোঙ সাম্রাজ্যের প্রখ্যাত কবি, পণ্ডিত এবং সরকারি আধিকারিক ফান চেংদা (১১২৬ - ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের দক্ষিণ প্রদেশগুলির বিভিন্ন অঞ্চলের ভূসংস্থান, কৃষি ও আর্থ বাণিজ্যিক পণ্যের উপর ভূ-বিদ্যার সনদ লিখেছিলেন। বহুবিদ্যাজ্ঞ চীনা বৈজ্ঞানিক শেন কুও (১০৩১ - ১০৯৫ খ্রিষ্টাব্দ) দেশের অভ্যন্তরে পাওয়া সামুদ্রিক জীবাশ্ম এবং বাঁশ গাছের এলাকা থেকে বহুদূরে পাওয়া বাঁশ গাছের জীবাশ্ম থেকে ভূমি-র গঠনের উপর আনুমানিক ধারণা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখে গেছেন। এই সোঙ সাম্রাজ্যের সময়কালে কোরিয়া এবং মধ্যযুগীয় কম্বোডিয়া-ও উপর ভৌগোলিক বিবরণ সমন্বিত বই পাওয়া যায়।
মিঙ সাম্রাজ্যের ভূগোলবিদ, জু জিয়াকে (১৫৮৭ - ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের বহু প্রদেশে ভ্রমণ করেছিলেন (অনেকসময় পদব্রজে)। তিনি একটি বৃহৎ ভৌগোলিক এবং ভূসংস্থানিক সনদ লিখেছিলেন যেখানে ছোটো ছোটো গিরিখাত, অভ্র ও স্ফটিক মিশ্রিত শ্লেটপাথরের মতো খনি গর্ভের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য সংবলিত তার ভ্রমণপথের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। চৈনিক লেখাগুলিতে মধ্য প্রাচ্য, ভারতবর্ষ এবং মধ্য এশিয়া-র বিভিন্ন সভ্যতার বর্ণনা আছে যেহেতু খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে পর্যটক ঝ্যাং কিয়ানের সত্যনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকে বৈদেশিক অঞ্চলের ভূসংস্থান ও ভৌগোলিক বিশেষত্ব সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।
ঈজিপ্ট ও ব্যাবিলনেও প্রাচীন আলোচনা ছিলভূবিদ্যা সম্পর্কে। ইজিপ্ট-এ নীলনদের অববাহিকা,ভূমধ্যসাগর ওপশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের মানচিত্র এবং ব্যাবিলনে পৃথিবীরমানচিত্রের অন্যতম প্রাচীন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।
গ্রিক-রোমান যুগে ভূবিদ্যা-র আলোচনা অনেক বিস্তার লাভ করে। অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য, নগর-পরিকল্পনা চিত্র,ভূমির জরীপ ও প্রকারভেদ, নদী-র দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাপ ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত অনুশীলন ও ব্যবহারবিধি-র প্রচলন ছিল। আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমে পিউটিন্জার টেবিল হিসাবে পরিচিত এক গোটানো মানচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যের সড়কপথগুলি দেখানো আছে এবং রোমান সাম্রাজ্যের বাইরে ব্রিটেন থেকে মধ্য-প্রাচ্য হয়েআফ্রিকা এবং তারপর ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন দেশের তখনকার জ্ঞাত অংশ সমূহ নিবদ্ধ আছে। একশোটির ও বেশি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছিল এই মানচিত্রটি-তে।
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেস (Eratosthenese, 276-194 BC) প্রাকৃতিক ভূগোলের অগ্রপথিক। তিনি এমন এক সময় এ বিষয়ে অবদান রাখেন যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবীর আকার ও আকৃতি সম্পর্কেই অনিশ্চিত ছিলেন। মিশরের বিভিন্ন স্থানের দূরত্বের সাথে সূর্যের আলোক রশ্মির পতনকোণের পার্থক্য হিসাব করে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের মাধ্যমে ইরাটোসথেনেস প্রাকৃতিক ভূগোলবিদ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চিরস্তায়ী আসন করে নিয়েছেন। এটিই ছিলো বর্তমানে পরিচিত ভূআকৃতিবিদ্যার (Geodesy) প্রথম গবেষণা। ইরাটোসথেনেসের বহু মূল্যবান ভূগোলবিষয়ক কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি মানচিত্রের গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করেছিলেন এবং নিজেকে একজন দক্ষ কার্টোগ্রাফার (cartographer) হিসেবে গড়ে তুলেন। যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবী গোলাকার না চেপ্টা এ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত, তখন ইরাটোসথেনেস গোলাকার পৃথিবীর কোন কোন স্থান সূর্যালোক দ্বারা অপর মণ্ডল অপেক্ষা অধিক উষ্ণ- এ বিষয়টি উপলব্ধি করেন এবং পৃথিবীকে কতিপয় পরিবেশমণ্ডলে বিভক্ত করে মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে, গোলাকার পৃথিবীতে একটি নিরক্ষীয় বলয়, দুটি মেরু বলয় এবং এদের মাঝে দুটিনাতিশীতোষ্ণ বলয় বিদ্যমান রয়েছে। ইরাটোসথেনেসের মৃত্যুর বহু শতাব্দি পর্যন্ত অনেক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেসের জ্ঞানকে যথার্থ বলে মেনে নিতে পারেননি (ব্লিজ, ১৯৯৩)।[৭]
বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিকহেরোডোটাস (Herodotus, 485-424 BC) মিসর ভ্রমণের সময় মিসরকে ‘নীল নদের দান’ বলে মন্তব্য করেন এবং নীল নদের মোহনায় পলি সঞ্চয়ের আকৃতির মাঝে গ্রিক অক্ষর ডেল্টার Δ সাদৃশ্য খুঁজে পান এ ধরনের ভূবৈচিত্র্যকে তিনি ডেল্টা (বাংলায় বদ্বীপ) নামকরণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দে প্লিনি জুনিয়র (প্লিনি সিনিয়র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন) নেপলস উপসাগরে একটি নৌকায় দাঁড়িয়ে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত প্রত্যক্ষ করে যে লিপিবদ্ধ করেছেন, তা সত্যই বিষ্ময়কর। তিনি বর্ণনা করেছেন, আগ্নেয়গিরির উপর ব্যাঙের ছাতার আকৃতির মেঘ কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং পম্পেই ও হারকোলিয়াম শহর দুটিকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলো। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তিনি যখন আগ্নেয়গিরির ধ্বংসযজ্ঞ দেখছিলেন, তখন তিনি জানতেন না তারই মামা/মায়ের বড় ভাই (Pliny The Elder)(যিনি আবার তারই দত্তক পিতা-ও ছিলেন), ভিসুভিয়াসের লাভাস্রোতে পড়ে মারা যাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন ভূগোলবিদদের অধিকাংশ রচনা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান পণ্ডিতদের সামান্য কিছু রচনা যা আমাদের পর্যন্ত এসেছে তা থেকে আমরা জাতে পারি, তখনকার নদীগুলো কত প্রশস্ত আর কত খরস্রোতা ছিলো, বর্তমানে ঘুমিয়ে আছে এরূপ কিছু আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ড এবং তৎকালীন কিছু উদ্ভিদের কথা, যা বর্তমানে সেসব স্থান থেকে হারিয়ে গেছে। রোমান যুগের অবসানে ইউরোপে দীর্ঘ সময়ব্যাপী অন্ধকার যুগের শুরু হয়। মধ্যযুগে ভূগোল চর্চার দীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিলো আরব অঞ্চলের মুসলিম এবং চৈনিক পণ্ডিতরা। মধ্যযুগে যুদ্ধ, আগুন এবং অবহেলার কারণে প্রাচীন অনেক মূল্যবান বই, মানচিত্র, রচনা চিরতরে হারিয়ে গেছে।
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয়দের সামুদ্রিক অভিযান এবং ব্যাপক আবিষ্কারের যুগে প্রাকৃতিক ভূগোলের পুনর্জাগরণ ঘটে। পর্তুগিজরা আফ্রিকার উপকূল ঘুরে এশিয়ার পূর্বপ্রান্তে এবং কলম্বাস আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফিরে এসে জানায় পশ্চিমের ভূখণ্ডের কথা। মানচিত্রাঙ্কনবিদগণ সংগ্রহকৃত জ্ঞানের ভিত্তিতে সঠিক মানচিত্র তৈরি করতে শুরু করেন। নতুন আবিষ্কৃত দেশগুলো সম্পর্কে ইউরোপের শহরগুলোতে কখন বড় বড় নদী, বরফাবৃত সুউচ্চ পর্বতমালা, বোনো উপকূল, বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, ভয়াল ভৃগুতট, সুউচ্চ বৃক্ষপূর্ণ গভীর বনভূমি, অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর বন্যপ্রাণি এবং অজানা সব মানুষের কথা প্রচার হতে শুরু করে। ইউরোপীয় অভিযাত্রী ও ভাগ্যন্বেষীরা সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজসম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন। ভৌগোলিক জ্ঞান সম্পদ লাভের চাবিকাঠিতে পরিণত হয়।
ইউরোপীয়রা যখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের স্থাপিত উপনিবেশগুলোতে সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নতুন ভূখণ্ডের সন্ধানে ছুটে চলছে, তখন কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী প্রাপ্ত নতুন নতুন তথ্যগুলো যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণে বের হন। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট তাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি সম্পদ নয়- জ্ঞান আহরণের জন্য নতুন মহাদেশ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ছিলেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশের ওরিনোকো নদী পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এবং ইকোয়েডর, পেরুতে মাঠজরিপ করেন। ১৮০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পূর্বে তিনি কিউবা ভ্রমণ করেন এবং মেক্সিকো পাগড় দেন। পরবর্তীতে তিনি সােইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে প্যারিসে স্থায়ী হয়ে তিনি আমেরিকা ভ্রমণের ওপর ৩০টি বই লেখেন এবং উনিশ শতকের বংশগতিসংক্রান্ত সেরা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ হিবে পরিচিত ছয় খণ্ডের ‘কসমস’ সিরিজটি প্রকাশ করেন।
হামবোল্টের রচনা থেকে আমরা তার সময়ের প্রাকৃতিক ভূগোলের রাজ্য সম্পর্কে জানতে পারি। এটি প্রমাণিত হয় যে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবলমাত্র পৃথিবীর পৃষ্ঠসম্পর্কিত বিষয়াদিই অধ্যয়ন করে না, এটি এখন মৃত্তিকা, উদ্ভিজ্জ, প্রাণী, সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডল প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সমীক্ষা করে। যদিও ‘ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি’ শব্দটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে, তথাপি ব্যাপক বিস্তৃত ক্ষেত্রের জন্য এর নাম ‘ন্যাচারাল জিওগ্রাফি’ হলেই অধিক মানানসই হতো।
প্রাকৃতিক ভূগোলের উন্নয়নে তৎকালীন সম্পদশালী রাশিয়ার জারগণ (সম্রাটগণ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অষ্টাদশ শতাব্দির মদ্যভাগে রাশিয়ার শাসকরা অনেক ভূগোলবিদকে মেরুপ্রদেশীয় সাইবেরিয়ার বিভিন্ন সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। রাশিয়ান ভূগোলবিদগণের মধ্যে মিখাইল লমোনোসোভ (১৭১১-১৭৬৫)-কে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সাইবেরিয়ার গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলো হচ্ছে- মৃত্তিকার জৈবিক উৎস উদ্ঘাটন, বরফখণ্ড বিচলনের একটি সমন্বিত নতির বিকাশসাধন, যা অদ্যাবধি মৌলিক হিসেবে বিবেচিত এবং তদানুযায়ী হিমবিজ্ঞান নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখার গোড়াপত্তন। লমোনোসোভের পথ ধরে উনবিংশ শতকে রাশিয়ার ভাসিলিভিচ ডকোচেভ (১৮৪৬–১৯০৩)-এর মতো বিখ্যাত ভূগোলবিদের জন্ম হয়। তিনি ‘ভূখণ্ড বা অঞ্চলের সমন্বিত নীতি’ এবং রাশিয়ান শেরনোজেম-এর ওপর অবদান রাখেন, যা পরবর্তী সময়ে সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য ভূত্বকীয় স্তর মৃত্তিকা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ধারণার সাথে পরিচিত করে| তিনি প্রথম মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস এবং মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেন। এভাবে নতুন ভৌগোলিক সমীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে মৃত্তিকাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। একারণে ভিসিলি ডকোচেভকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। রাশিয়ান পণ্ডিতদের অবদানে জলবায়ুবিজ্ঞানও ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হয়। রাশিয়ার জলবায়ুবিজ্ঞানীদের মধ্যে জার্মান বংশোদ্ভুত ভ্লাদিমির কোপেন সকলের অগ্রগণ্য। তিনি বিশ্বের জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করেন, যা আজও সঠিক হিসেবে সমাদৃত। যাহোক, এ মহান ভূগোলবিদ তার কাজের মাধ্যমে পুরাজলবায়ুবিজ্ঞানে অবদান রাখেন। ‘ভূতাত্ত্বিক অতীতের জলবায়ু’ নামে তার গবেষণার জন্য তাকে পুরাভূগোলের জনক বলা যায় (আলম, কে. আশলাফুল-২০১৪)।[৮]
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথমভাগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাতভূগোলবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস (W.M. Davis)-এর অবদান। ভূগোলের সাধারণ তত্ত্ব হিসেবে তার প্রদত্ত ‘ভৌগোলিক চক্র’ (geographical cycle) কেবল বিষয় হিসেবে ভূগোলকে তার দেশে প্রতিষ্ঠিত করেনি, বরং প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মহামডেল (paradigm) হিসেবে কাজ করে। ডেভিসের মতানুসারে, সময়ের বিবর্তনে ভূগঠন পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যায়। (উইলিয়াম মরিস ডেভিসের এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফলেভূমিরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখা বিকাশ লাভ করে।
প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তীত হয়েছে। ১৮৫০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে জ্ঞানের এ শাখায় চারটি প্রধান ধারণা খুবই জোড়ালোভাবে প্রভাববিস্তার করেছিলো; যথা-
(১)সমতাবাদ (Uniformitarianism) : এ তত্ত্ব পৃথিবীর বর্তমান অবস্থর জন্য বিপর্যয় শক্তি (catastrophic force) দায়ী এ ধারণা বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে ধারণা দেয় যে, অবিরত সমতাসাধনের বিদ্যমান প্রক্রিয়াসমূহ আমাদের গ্রহটির অতীত ও বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
(২)বিবর্তনবাদ (Evolution theory) : চার্লস ডারোউনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বে প্রভাবিত হয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানীগণ প্রাকৃতিক প্রপঞ্চের (phenomena) বিভিন্নতার বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যা প্রদান শুরু করেন।
(৩)তথ্যানুসন্ধান ও জরিপ (Exploration and Survey) : ১৯০০ সালের পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান আবিষ্কার ও সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান ও জরিপ কাজে প্রাকৃতিক ভূগোলের সকল ক্ষেত্র সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলো।
(৪)সংরক্ষণ (Conservation) : ১৮৫০ সালের প্রথম দিক থেকে একসময়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যবিশিষ্ট এলাকায় মানবিক উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়।
১৯৫০ সালের পর থেকে দুটি শক্তি প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি নির্ধারণে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে। যথা-
(১)সংখ্যাতাত্ত্বিক বিপ্লব (Quantitative Revolution) : এসময়ে প্রাকৃতিক ভূগোলে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ কেন্দ্রীয় মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়। মানচিত্রায়ন, মডেলসমূহ, পরিসংখ্যান, গণিত ও প্রকল্প পরীক্ষণ সবকিছু আসে পরিমাপ থেকে।
(২)মানব-ভূমি সম্পর্ক (Human/Land Relationships) : পরিবেশের ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক ভূগোলের বহু গবেষক পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাবের বিষয়ে সমীক্ষা শুরু করেন (আলম, কে. আশরাফুল-২০১৫)।[৯]
প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্রসমূহ
[সম্পাদনা]পৃথিবী সম্পর্কে তথ্য আহরণের মধ্য দিয়ে ভৌগোলিক জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিলো। বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞানের পরিধি এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে যে, কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত ভৌগোলিক জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব নয়। ফলে দেখা দিয়েছে বিশেষায়নের ঝোঁক। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের মতো প্রাকৃতিক জগতের বিষয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের দিনে বিরল। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভৌগোলিক জ্ঞানের সন্ধানে উত্তরোত্তর জটিল-কঠিন পদ্ধতি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশেষায়ন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানে বিশেষায়নের প্রয়োজন আছে। প্রথমে সামগ্রিক জ্ঞানকে কতকগুলো বিষয়ে খণ্ড করা হয়, আবার প্রতিটি বিষয়কে কতিপয় বিশেষীকরণে ভাগ করা হয়। এভাবেই বিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। বিগত শতকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন বিষয় একটি গুচ্ছ হিসেবে বিকশিত হয়েছে (ব্লিজ-১৯৯৩)।[৭]
১. ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) : ভূদৃশ্যের ভূগোল ‘ভূরূপবিজ্ঞান’ বাভূমিরূপবিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভূগোলের সর্বাপেক্ষা উৎপাদনশীল একটি ক্ষেত্র। মূল ইংরেজি পরিভাষাটি চয়ন করেন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ আলবার্ট প্যাঙ্ক (Albert Penck)। গ্রিক তিনটি শব্দ Geo অর্থ পৃথিবী, morph অর্থ গঠন বা আকার এবং logos অর্থ বর্ণনা দিয়ে ভূপৃষ্ঠের গঠনকাঠামো সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অবয়বসমূহের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকৃতি এবং এগুলোর উদ্ভবের পশ্চাতে ক্রিয়াশীল কার্যকারণ প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনাই হচ্ছে ভূরূপবিজ্ঞান। ভূরূপবিজ্ঞান হচ্ছে ভূগোলের সেই শাখা, যাতে অভ্যন্তরীণ অবস্থাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের ভূদৃশ্য পরিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।
ভূরূপবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু মূলত (১) ভূমির বন্ধুরতা বা ভূগঠনের দিক এবং স্কেল, (২) পদ্ধতি- যা ভূপৃষ্ঠের আকৃতি প্রদান করে, এবং (৩) যে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমিরূপ পর্যালোচনা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে (আলম, ২০১৪)।[৮]
২. জলবায়ুবিজ্ঞান (Climatology) : আবহবিদ্যা ও প্রাকৃতিক ভূগোল যৌথভাবে জলবায়ু ও তার বিস্তৃতি আলোচনার জন্যজলবায়ুবিজ্ঞান গঠন করেছে। জলবায়ুবিজ্ঞান কেবলমাত্র জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ বা বিস্তৃতিই পর্যালোচনা করে না, বৃহত্তরভাবে এটি মানব সমাজের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভিজ্জের ধরন, মৃত্তিকা গঠনসহ পরিবেশের বিভিন্ন প্রশ্ন ও অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীকে বেষ্টনকারী বায়ুমণ্ডলের উপাদন এবং এদের বৈশিষ্ট্যের বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনাই হচ্ছে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিজ্ঞান। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অপরদিকে, কোনো স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা পর্যালোচনা করলে যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ুবিজ্ঞানের তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো : (১) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিজ্ঞান, (২) আঞ্চলিক জলবায়ুবিজ্ঞান ও (৩) ফলিত জলবায়ুবিজ্ঞান।
৩. জীবভূগোল (Biogeography) : জীববিজ্ঞানের দিক থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান, বাস্তুবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান- এ তিনটি উপক্ষেত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত। যখন জীববিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক ভূগোল উপরিস্থাপিত (overlap) হয়, তখন বৃহৎ উপক্ষেত্র জীবভূগোলের সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেখানে জীবভূগোল নিজেই বিশেষায়িত। প্রাকৃতিক ভূগোল উদ্ভিদবিদ্যার সমন্বয়ে উদ্ভিদভূগোল গঠন করে এবং প্রাণিবিদ্যার সাথে সমন্বয়ে প্রাণিভূগোল উপক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। স্মর্তব্য যে,জীবভূগোল নিজেই বাস্তুবিদ্যার সংযোজক, যা এই উপক্ষেত্র দুটির মধ্যে অবস্থান করে; বাস্তবে প্রাণিভূগোল ও উদ্ভিদ ভূগোল উভয়েই জীবভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের পর্যালোচনাই হচ্ছে জীবভূগোল, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৃত্তিকা, প্রাণী ও উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জীবভূগোল শব্দটি দ্বারা জীববিজ্ঞান ও ভূবিদ্যা উভয়কে একত্রে নির্দেশ করে। অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডলে জীবের বসবাসের উপযোগী অংশ যা জীবমণ্ডল নামে পরিচিত- এর আলোচনার ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের জৈব বিষয়গুলো উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, প্রাণ-রসায়ন প্রভৃতি শাখায় পর্যালোচনা করা হলেও জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ভূগোল এর অর্থ ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করে থাকে।
৪. মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্র মৃত্তিকা ভূগোলের সম্পর্ক রয়েছেমৃত্তিকাবিজ্ঞানের (Soil Science) বা পেডোলজির (Pedology) সাথে। পেডোলজিস্টরা মৃত্তিকার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি এবং মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে থাকেন। মৃত্তিকা ভূগোলে মৃত্তিকার পারিসরিক ধরন, বিস্তৃতি এবং জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ ও মানুষের সাথে সম্পর্কের বিষয় আলোচনা করা হয়।
৫. সমুদ্র ভূগোল (Marine Geography) : সমুদ্র ভূগোল সমুদ্রবিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি গঠনে সহায়তাকারী অন্যতম উপাদান যেমন মানবীয়, তেমনি প্রাকৃতিক। যে শাস্ত্রে বারিমণ্ডলের সমীক্ষা করা হয়, তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বলে। এটি বারিমণ্ডলের প্রাকৃতিক ও জৈবিক বিষয়গুলো বর্ণনা করে। সমুদ্রবিজ্ঞান অনেকগুলো উপক্ষেত্রে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র ভূতত্ত্ব, সমুদ্র ভূরূপবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক সমুদ্রবিদ্যা, সমুদ্রের জলের রসায়ন, জৈব সমুদ্রবিদ্যা ইত্যাদি (আলম, ২০১৪)।[৮]
5. জ্যোতির্বিজ্ঞান আদি বিজ্ঞানের প্রকৃতি গুগলের নিজস্ব শাখা হলোজ্যোতির্বিজ্ঞান। ভূগোলের এই শাখায় সৌরমণ্ডল তথা মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ,নক্ষত্র,ব্ল্যাকহোল, গ্যালাক্সি সম্পর্কে ভূগোলের শাখায় আলোচনা করা হয়। একটি প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন শাখা।
বায়ু, জল, জীব, মৃত্তিকা এবং ভূগঠন প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার প্রধাণ উদ্দেশ্য এবং মানুষ কর্তৃক ভূপৃষ্ঠে এসবের ব্যবহার সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়। আবার পৃথিবীকে মানুষের সর্বোত্তম ব্যবহারের স্বার্থে বিজ্ঞানীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার উদ্দেশ্যকে তাদের মাত্রা (dimension) এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করা যায়।
আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বসবাস ও হাঁটাচলা করি, প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠ বলতে তারও থেকে বেশি কিছু বোঝায়। ভূপৃষ্ঠ কেবল একটি আয়তন (volume) নয়, বরং এর সাথে মানুষের সম্পর্ক ও অনুভবের দ্বারা একে চিহ্নিত করতে হবে।
এ আয়তনের কেন্দ্রে রয়েছে ভূপৃষ্ঠ, যেখানে আমরা বসবাস করি। এরসাথে ভূপৃষ্ঠের ঠিক নিচে ভূত্বকের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভূমিরূপ ভূত্বকের পৃষ্ঠকে সজ্জিত করেছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির কর্মকাণ্ডের ফলাফল। ভূপৃষ্ঠের উপরের বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রাকৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া ও অবস্থা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে ভূপৃষ্ঠের উপর ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, ভূত্বকের নিচের কিছু অংশ, জল ও স্থলভাগসহ সমগ্র ভূপুৃষ্ঠ এবং এর উপরের প্রায় ২০ কিমি ব্যাপী বায়ুমণ্ডল এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রাকৃতিক ভূগোলে স্থলভাগ বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কারণ এটি হাতের কাছে এবং মানুষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যাহোক, খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ইত্যাদির প্রধাণ উৎস এবং ভূপৃষ্ঠে পরিবহনের প্রধাণ মাধ্যম হিসেবে মহাসাগরগুলো ক্রমবর্ধমানহারে মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল ও জীবমণ্ডলের প্রতিটি পদার্থ কিছুসংখ্যক উপাদান দ্বারা গঠিত। যেমন- বায়ুমণ্ডলকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয়। শিলা, ভূমিরূপ, মৃত্তিকা ইত্যাদি অশ্মমণ্ডলের উপাদান। নদী, হ্রদ, হিমবাহ, বরফাবরণ, মহাসাগর ইত্যাদি বারিমণ্ডলের অংশ এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রণী জীবমণ্ডলের অংশ (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭)।১০ প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন উপাদানের সন্বেয়ে প্রাকৃতিক ভূগোলের অনেক প্রপঞ্চ (phenomenon/ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গঠিত হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোলে এরসব উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথিবীর বর্ণনা করা যায়। এগুলো সময়ে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রায়শ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বর্ষণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ হচ্ছে বায়ুমণ্ডীয় চলরাশি বা সূচক, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও সময়ের আবহাওয়া অবস্থা প্রকাশ করে। এদের প্রকৃতি এবং দীর্ঘ সময়কালে এগুলোর পরিবর্তন জলবায়ুর অবস্থা বর্ণনা করে। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। এসব চলরাশি বা সূচক ভৌগোলিক পার্থক্য প্রদর্শন করে, একই সাথে এর দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ করা যায় (আলম, ২০১৪)।[৮]
যখন একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন অপর একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন ঘটায়, তখন উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে।চলরাশি বা সূচক গুলো কীভাবে একে অপরের ওপর প্রভাববিস্তার করে তা জানা থাকলে প্রপঞ্চ (ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গুলোর পরিবর্তন ও ভৌগোলিক ব্যাখ্যা করা যায়।
এরূপ মিথস্ক্রিয়া সাধারণত অনেক বেশি জটিল হয়ে থাকে। বাস্তবে অসংখ্য চলরাশি বা সূচক একসাথে মিথস্ক্রিয়া করে। সিস্টেমগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সম্পর্কগুলোকে মডেলরূপে তৈরি করার প্রয়াস চালানো হয়। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধাণ উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ বা আয়তনকে বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল, জীবমণ্ডল এবং মানুষের পারস্পরিক মিথস্কিয়াকে একটি পদ্ধতি (system) হিসেবে উপস্থাপন করা (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭).[১০]
প্রাকৃতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি
[সম্পাদনা]প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এতে অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডল- এ চারটি মণ্ডলের উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে ও গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হয়।
উল্লেখিত চারটি উপাদান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য পৃথিবীর উৎপত্তি, বয়স, ভূঅভ্যন্তরের গঠন এবং সমুদ্রের পর্যঙ্ক প্রভৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ সমীক্ষা করা হয়। ভূআলোড়নের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃজ শক্তির অধ্যয়ন, উভয়বিধ শক্তির মিথস্ক্রিয়া এবং এদের ফলাফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের উঁচুনিচু ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট বহিঃজ শক্তি ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলোকে সমুদ্র সমতলে নামিয়ে আনার কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকে।
প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠের পর্বতমালা, ভাঁজ, চ্যুতি প্রভৃতি বন্ধুর ভূপ্রকৃতির উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য এবং বিস্তৃতি বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, এদের বিস্তৃতি এবং অগ্ন্যুঃপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ ও বিপর্যয়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর প্রভাববিস্তার করে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। বহিঃজ শক্তির দ্বারা (বিচূর্ণীভবন, ক্ষয়ীভবন, নগ্নীভবন) সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠের অবয়বগুলোর পর্যালোচনা থেকে ভূমিরূপ পদ্ধতি এবং এর কাজের ধরন (প্রবহমান জলরাশি, ভূগর্ভস্থ জল, সমুদ্র ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ) সম্পর্কে জানা যায় (আলম, ২০১৪)।[৮]
বারিমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর পর্যালোচনায় সমুদ্র তলের বন্ধুরতা, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, সমুদ্রের সঞ্চয়,জোয়ার-ভাটা,সমুদ্র স্রোত, প্রবাল প্রাচীর, এটল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলোর পর্যালোচনায় বায়ুমণ্ডলের সংমিশ্রণ, গঠন, উপাদান, জলবায়ু ও আবহাওয়ার নিয়ামক, সৌরতাপ, সৌর বিচ্ছুরণ, তাপসমতা, ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ, বায়ুভর, বায়ুপুঞ্জ, ঘূর্ণিঝড়,জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মৃত্তিকা ক্ষয় ও সঞ্চয়ন, পরিবেশ দূষণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারাবাহিক পর্যালোচনা একই সাথে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ার সম্পর্ক প্রাকৃতিক ভূগোলের সমীক্ষার বিষয়। নিম্নলিখিত কারণে প্রাকৃতিক ভূগোলের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুতে প্রধাণ পরিবর্তনগুলো সূচিত হয়ে থাকে :
১. প্রাকৃতিক ভূগোল মানুষের কল্যাণে অধিকতর অর্থবহ ও প্রায়োগিক এবং মানবীয় ভূগোলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল সংবদ্ধ এবং সমাজের সাথে অধিকতর সম্পর্কিত করার ইচ্ছা সর্বজনীন।
২.প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রতি মানুষের অধিকতর মনোযোগ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের বৈরী আচরণের ফলে পরিবেশগত ভরেসাম্য বিনষ্ঠ এবং প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান।
৩. বহিরাঙ্গন ও গবেষণাগারে যান্ত্রিকায়ন ও বিভিন্ন ভূমিরূপ পদ্ধতি পরিমাপের ক্রিয়াপদ্ধতি এবং উপাত্তসমূহের গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রতি অধিকতর গুরুত্বারোপ।
৪. কতিপয় বিশেষ অবয়ব, যেমন- বাস্তুপদ্ধতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা, জলবিজ্ঞান, প্লেট টেকটোনিক্স ইত্যাদির প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেওয়া।
৫. সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাক্রো-টেম্পোরাল (macro-temporal) স্কেলের পরিবর্তে মাইক্রো-টেম্পোরাল (micro-temporal) স্কেল এবং বৃহৎ ম্যাক্রো-স্পেশিয়াল (macro-spatial) স্কেলের পরিবর্তে ক্ষুদ্র মাইক্রো-স্পেশিয়াল (micro-spatial) স্কেল; ভূমিরূপ ও পারিবেশিক (environmental) পদ্ধতির সমীক্ষায় সমাজের সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত পারিবেশিক সমস্যাসমূহ সমাধনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে (আলম, ২০১৪)।[৮]
ভূগোল অসংখ্য বৃহত্ উপশাখায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে:
মানবীয় ভূগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এতেমানুষ, তাররাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক,সামাজিক, এবংআর্থনৈতিক দিক নিয়ে পর্যালোচনাভূক্ত।
মানবিক ভূগোলে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, স্থানিক পার্থক্য এবং এই পার্থক্যের পেছনে প্রাকৃতিক প্রভাবকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।
মানবীয় ভূগোলকে অনেকগুলো বিস্তৃত ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:
কালে কালে মানবীয় ভূগোল গবেষণা করার বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতিগুলো হচ্ছে: