Movatterモバイル変換


[0]ホーム

URL:


বিষয়বস্তুতে চলুন
উইকিপিডিয়াএকটি মুক্ত বিশ্বকোষ
অনুসন্ধান

পানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পানির তিনটি অবস্থা: তরল, কঠিন (বরফ), এবং বাতাসে মিশ্রিত (অদৃশ্য)জলীয় বাষ্পমেঘ হলজলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত বাতাসেঘনীভূত পানিবিন্দুর সমষ্টি।

পানি বাজল হলো একটি অজৈব, স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং প্রায় বর্ণহীন একরাসায়নিক পদার্থ, যা পৃথিবীর বারিমণ্ডলের ও যে কোন প্রাণী - কোষ বা উদ্ভিদ-কোষের একটি প্রধান উপাদান। যদিও পানি কোন প্রাণী বা উদ্ভিদকে কোন রকমের শক্তির বা জৈব পরিপোষকের যোগান দেয় না, তবু এখনও পর্যন্ত আমরা যা জানি, তাতে সমস্ত ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। এই জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার আগে প্রথমে সেখানে পানির অস্তিত্ব খোঁজেন। কারণ, এখনও মোটামুটিভাবে মনে করা হয় যে, পানি যদি না থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণ থাকতে পারে না।

পানিররাসায়নিক সংকেত হলH2Oইউপ্যাক (IUPAC) নিয়ম অনুযায়ী পানির রাসায়নিক নাম ডাইহাইড্রোজেন মনোঅক্সাইড। অর্থাৎ পানির একেকটি অণু একটিঅক্সিজেনপরমাণু এবং দু'টিহাইড্রোজেনপরমাণুর সমযোজী বন্ধনে গঠিত। এই H2O যৌগটির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো - অপেক্ষাকৃত অল্প তাপমাত্রার পরিসরের মধ্যে এর তিনটি বিভিন্ন অবস্থা— কঠিন,তরল ও বায়বীয় পরিলক্ষিত হয়। হাইড্রোজেন পরমাণু 104.45° কোণে অক্সিজেন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত থাকে।[] এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ০°‌–১০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে H2O তরল অবস্থায় থাকে। ০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি জমে কঠিনবরফে পরিণত হয় এবং ১০০° সেলসিয়াসে পানি বায়বীয় অবস্থাজলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এই জন্য ০° সেলসিয়াসকে বলা হয় পানির গলনাঙ্ক এবং ১০০° সেলসিয়াসকে বলা হয় পানির স্ফুটনাঙ্ক। গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের এই মান (যথাক্রমে, ০° ও ১০০° সেলসিয়াস) এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপেই পরিলক্ষিত হয়। বলা বাহুল্য, বায়ু-চাপের পরিবর্তনের সংগে সমস্ত পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মানের পরিবর্তন হয়। জলীয় বাষ্প ঊর্ধ বায়ুমণ্ডলে ঠাণ্ডা হয়ে যখন সূক্ষ্ম পানি-কণা ও বরফ-কণায় রুপান্তরিত হয়, তখন তাকে আমরা বলি মেঘ। যখন পানি-কণাগুলো আকারে বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর ওপর নেমে আসে, তখন তাকে বলি বৃষ্টি। যখন বরফ-কণাগুলো আকারে বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর ওপর নেমে আসে, তখন তাকে বলি তুষারপাত। এখানে আরও বলা যেতে পারে, পৃথিবীতে তরল স্ফটিক রূপেও পানির অস্তিত্ব দেখা যায়।[][]রাসায়নিক যৌগের নামকরণ প্রক্রিয়া অনুসারে পানির বিজ্ঞানসম্মত নাম হলোডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড[]

ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশ জুড়ে পানির অস্তিত্ব রয়েছে[] এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্তজীবের জীবনধারণের জন্যই পানি একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ।[] পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানির ৯৬.৫% পাওয়া যায়মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১%বায়ুমণ্ডলে অবস্থিতমেঘ,জলীয় বাষ্প হিসেবে ওবৃষ্টিপাত,তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে।[][] পৃথিবীর পানির মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ পানি এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ পানি ও বরফ। বিশুদ্ধ পানির ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায়নদীতে,হ্রদেবায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্নজীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে।[] পৃথিবীতে পানি বা জল প্রতিনিয়তইবাষ্পীভবন,ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্টপানিচক্র মাধ্যমে ঘূর্ণমান।বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতেবৃষ্টিপাত,তুষারপাত ইত্যাদি ঘটে।

মানব জাতি সহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্যসুপেয় পানি অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় পানির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি ও প্রায় আড়াইশ কোটিমানুষ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থেকে বঞ্চিত।[] নিরাপদ পানির ব্যবহারের সাথে মাথাপিছুমোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।[১০] কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি পানি সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে।[১১]নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় পানির চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে।[১২] বিশ্ব অর্থনীতিতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ পানি বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহনের কাজে সহায়তা করে।মানুষের ব্যবহৃত বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৭০% ব্যবহৃত হয়কৃষিকার্যে[১৩]

শব্দগত ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

পানীয় [সংস্কৃত ধাতু √ পা + অনীয়] শব্দটির সামান্য পরিবর্তিত হয়ে "পানি" শব্দ তৈরি হয়েছে। এই শব্দটি বাংলায় মূলত মুসলিমরা ব্যবহার করে থাকে।[১৪][১৫] সমোচ্চারিত পাণি, যার অর্থ হাত, এটি সংস্কৃত ধাতু √ পণ্ + ই = পাণি থেকে এসেছে। অপরদিকে "পানি" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধাতু √ পানি্ + অ = পানি থেকে।[১৬] "জল" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধাতু √ জল্‌ + অ = জল থেকে। এই শব্দটি মূলত বাংলার হিন্দু বাঙালিরা ব্যবহার করে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম

[সম্পাদনা]
পানির অণুগুলির মধ্যেহাইড্রোজেন বন্ধনীর প্রতিরূপ
একফোঁটা পানির আঘাতে পানিতে কৈশিকীয় তরঙ্গ তৈরী হয় এবং সাময়িকভাবে ফোয়ারার মত ছিটকে ওপরের দিকে উঠে যায়
বরফগুঁড়োউইলসন বেন্টলী কৃত, ১৯০২
মাকড়সার জালে লেগে যাওয়াশিশির
পারদের ও পানিরকৈশিকীয় ক্রিয়ার তুলনা

পানিররাসায়নিক সংকেত হলH2O: পানির একটি অণুতে দু'টিহাইড্রোজেনপরমাণু একটিঅক্সিজেনপরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই পৃথিবীতে পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান।পানীয় বাষ্পমেঘ হিসেবে আকাশে,সমুদ্রের পানি হিসেবেমহাসাগরে,হিমশৈল হিসেবে মেরু অঞ্চলেরমহাসাগরে,হিমবাহনদী হিসেবেপর্বতে এবং ভূগর্ভে পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

মনে করা হয় বৃহদাকার গ্রহগুলির অভ্যন্তরে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায়, পানি আয়নিত অবস্থায় থাকে। ওই অবস্থায় পানির অণুগুলি ভেঙ্গে গিয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আয়নের একটি মাধ্যম তৈরী করে। আরো বেশি চাপে অক্সিজেন কেলাসিত হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন আয়নগুলি মুক্তভাবে অক্সিজেন আয়নের কেলাসের সজ্জার মধ্যে ভেসে বেড়ায়। এই বিশেষ অবস্থাকে পানিরঅতিআয়নিত অবস্থা বলে।[১৭]

পানির মুখ্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি হল:

  • স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় পানি তরল পদার্থ। পানি স্বাদ ও গন্ধহীন। পানি ও বরফের নিজস্ববর্ণ সামান্য নীল হলেও, কম পরিমাণে উপস্থিত থাকলে উভয়ই বর্ণহীন মনে হয়।পানীয় বাষ্পও বর্ণহীন, ফলে অদৃশ্য।[১৮]
  • দৃশ্যমানতড়িচ্চুম্বকীয় বর্ণালীতেস্বচ্ছ হওয়ায় পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে, যা জলজ উদ্ভিদের জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিওঅতিবেগুনী এবংঅবলোহিত রশ্মিসমূহের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পানিতে শোষিত হয়।
  • অক্সিজেন পরমাণুরতড়িৎ-ঋণাত্মকতাহাইড্রোজেনের তুলনায় বেশি হওয়ায় তাতে সামান্য ঋণাত্মক তড়িৎআধান থাকে এবংহাইড্রোজেনপরমাণুগুলি সামান্য পরিমাণে ধনাত্মক তড়িৎধর্মী হয়। এরফলে পানির অণুতে একটিদ্বিমেরু ভ্রামকের সৃষ্টি হয়। এই ধর্মের জন্যে পানির অণুগুলি তার আকারের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের বেশি সংখ্যক আন্তঃআণবিকহাইড্রোজেন বন্ধনী তৈরী করতে পারে। এইসব কারণে পানির অণুগুলির মধ্যেসংসক্তি বল অত্যন্ত দৃঢ় হয়। যে কারণে পানিরপৃষ্ঠটান[১৯] এবং কৈশিকীয় বলের মান বেশি হয়। অত্যন্ত সরু নল (কৈশিকীয় নল) দ্বারামাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে পানির ওপরে উঠে যাওয়ার প্রবণতাকেকৈশিকীয় ক্রিয়া বলে। পানির এই ধর্মের জন্যেই মাটি থেকে পানি শোষণ করে বেঁচে থাকা উদ্ভিদেরা তা করতে পারে।
  • পানির নিজস্বদ্বিমেরু ভ্রামক থাকায় পানি প্রায় সব তড়িৎযোজী পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। এছাড়াও বহু সমযোজী পদার্থও পানিতে দ্রবীভূত হওয়ায় পানি রাসায়নিক পরীক্ষাগারে খুব ভালো দ্রাবক হিসেবে কাজ করে। একারণে পানিকে কখনো কখনোসর্বজনীনদ্রাবক বলা হয়ে থাকে। পানিতে দ্রবীভুত হয় এরকম কিছু পদার্থ হলঃলবণ,চিনি,অম্ল,ক্ষারক, বেশ কিছু গ্যাস বিশেষত-অক্সিজেন,কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু পদার্থ আছে যারা বিশেষ করে পানিতে দ্রবীভূত হয়না; যেমন-তেল, গ্রিজ ইত্যাদি।

স্বাদ ও গন্ধ

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন ধরনের পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে তাতে বিভিন্ন স্বাদ ও গন্ধের সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী তাদের ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করতে সক্ষম যে কোন পানি পান করার উপযুক্ত। কোন প্রাণীই লবণাক্ত অথবা দূষিত পানি পান করে না। ঝরনার পানি এবং খনিজ মিশ্রিত পানিতে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা সেই পানিতে মিশ্রিত খনিজ পদার্থ থেকে উদ্ভূত। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি (H2O) সম্পূর্ণ স্বাদহীন ও গন্ধহীন। খনিজ মিশ্রিত পানির বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে যে বিশুদ্ধতার দাবি করা হয় তা আসলে পানিতে কোন ধরনেরজীবাণু, দূষিত পদার্থ অথবাবিষের অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করে। প্রকৃত অর্থে সেই পানি বিশুদ্ধ নয় কারণ তাতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশ্রিত থাকে।

জীবজগতে প্রভাব

[সম্পাদনা]

জীবজগতে পানির প্রভাব অপরিসীম ৷ পানি ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতো না ৷ এছাড়াও মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজনীয় পদার্থ হল পানি ৷ একজন মানুষ পানি ছাড়া গড়ে মাত্র তিন দিন বেচে থাকতে পারে অণুজীব, হল এককোষী জীব যাদের সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না এবং একক-কোষীয় আকারে অথবা কোষের কলেনি বা উপনিবেশ হিসাবে বিদ্যমান থাকে। এগুলিকে জীবাণু বা অণুবীক্ষণিক জীব হিসাবেও পরিচিত কারণ এগুলি কেবলমাত্র একটি মাইক্রোস্কোপের নীচেই দেখা সম্ভব। এটি অনুমান করা হয় যে অণুজীবগুলি পৃথিবীর জৈববস্তুর প্রায় ৬০% তৈরি করে।

জীবজগতে জলের প্রয়োজনীয়তা

[সম্পাদনা]

জীবের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও গ্যাসীয় উপাদান জল-মাধ্যমেই কোষ থেকে কোষে যায়। কোষের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ জল-মাধ্যমেই বাহিত হয়ে নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গে যেতে পারে। উন্নত উদ্ভিদেরা মাটি থেকে মূলরোমের সাহায্যে জল শোষণ করে। প্রাণীরা খাদ্যদ্রব্য থেকে জল সংগ্রহ করে এবং আলাদাভাবে শুধু জল পানও করে। জীবদেহে জলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নীচে বর্ণনা করা হল:

  • জল প্রোটোপ্লাজমের প্রধান উপাদান। জীবনের অস্তিত্ব জল ছাড়া সম্ভব নয়।
  • জল-মাধ্যমে ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ ইত্যাদি ভৌত প্রক্রিয়াগুলি জীবদেহে সাধিত হয়।
  • সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে জল গ্রহণ করে। জল ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ সম্ভব নয়।
  • উদ্ভিদ-দেহের অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচনে পরিত্যক্ত হয় বলে উদ্ভিদের দেহের পরিবেশ ঠান্ডা থাকে এবং উদ্ভিদ আরও জল শোষণ করতে সক্ষম হয়।
  • জীবকোষে অধিকাংশ বিপাকীয় কাজ জলের উপস্থিতিতে ঘটে।
  • জীবদেহের বিভিন্ন অংশের ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে জল রক্ষা করে।
  • জীবদেহে পরিবহণের ব্যবস্থা একান্তভাবেই জলনির্ভর। জল ছাড়া পরিবহণ সম্ভব নয়।
  • প্রাণীদের দেহে তাপমাত্রা বজায় রাখতে জল সাহায্য করে।
  • জলের উপস্থিতিতে আয়ন গঠন তাড়াতাড়ি হয়।
  • জল মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসেচক তাদের কর্মক্ষমতা বজায় রাখে।
  • কোষের রসস্ফীতি চাপ বজায় রেখে কোষের বা সমগ্র দেহের নির্দিষ্ট আকার ঠিক রাখতে জল সাহায্য করে। জলের অভাবে, জলশূন্যতা উপসর্গ দেখা দেয়।
  • বিভিন্ন খনিজ লবণ জল-মাধ্যমে জীবদেহে গৃহীত হয়।

উল্লেখ্য, ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের মানুষের দেহে প্রায় ৪৭ লিটার জল থাকে। মানুষের চামড়ায় ২০%, পেশীতে ৭৫%, রক্ত-কণিকায় ৬০%, রক্ত-রসে ৯২% জল থাকে।[২০]

মানবসভ্যতায় প্রভাব

[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্য ও দূষণ

[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য বিশুদ্ধ পানি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। দূষিত পানি পান করার দ্বারা মানবদেহে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি পান করার ফলে বিশেষ করে কিডনি আক্রান্ত হয়। আমরা অনেকে বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রতি মনোযোগী নয়। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা অন্তত পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করি। শহরের মানুষেরা সাধারণত সকলে ট্যাংকির পানি ব্যবহার করে থাকি। অনেক দিন যাবত ট্যাংকি পরিষ্কার না করার কারণে ট্যাংকিতে শেওলা ও ময়লাতে পরিপূর্ণ থাকে। আমরা অনেকে সে দিকে মনোযোগ দেই না। আমরা চেষ্টা করব পানির ট্যাংকি যাতে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকে। তাহলে আমরা পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পাব।

মানবজাতির ব্যবহার

[সম্পাদনা]
কৃষিজমিতে সেচ

কৃষিতে পানির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হল সেচে। কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে সেচে পানির প্রায় ৯০% ব্যবহৃত হয়[২১] এবং অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলিতেও পানির সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় সেচে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৩০% সেচে ব্যবহৃত হয়)।[২১]

পান করা

[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ:পেয় পানি

বোতলভর্তি পানি পানরত একটি মেয়ে।
পানির গুণগত মান: বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা অনুসারে ব্যবহৃত বিশুদ্ধ পানি

মানবদেহের আকারের সাপেক্ষে তাতে ৫৫%-৭৮% পানি থাকে।[২২] সক্রিয় থাকার জন্য এবং নিরুদন প্রতিরোধ করার জন্য মানবদেহের প্রতিদিন এক থেকে সাত লিটার পানির প্রয়োজন হয়। দেহের প্রয়োজনীয় পানির প্রকৃত পরিমাণ নির্ভর করে কাজকর্মের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ইত্যাদি নানা পরিস্থিতির উপর। শরীরে গ্রহণ করা পানির মোট পরিমাণের অধিকাংশই সরাসরি পানি পান করার পরিবর্তে আসে বিভিন্ন খাদ্য এবং অন্যান্য পানীয় থেকে। একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের ঠিক কত পরিমাণ পানির দরকার তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা না গেলেও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মত প্রকাশ করেছেন যে শরীর সুস্থ রাখতে মোটামুটি প্রতিদিন ২ লিটার (৬ থেকে ৭ গ্লাস) পানির প্রয়োজন।[২৩] ব্যায়াম অথবা গরম আবহাওয়া জনিত কারণে শরীর থেকে নির্গত হওয়া পানি বাদ দিয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র সাধারণত একজন গড় পুরুষের জন্য ১ লিটার পানি অর্থাৎ অল্প পানি পান করার পক্ষে মত দেয়।[২৪] যে সব ব্যক্তি সুস্থকিডনির অধিকারী তাদের পক্ষে অতিরিক্তি পানি পান করা অসুবিধাজনক কিন্তু মূলতঃ ব্যায়াম করলে অথবা আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে অল্প পরিমাণ পানি পান করা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। কোন ব্যক্তি ব্যায়াম করার সময় প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি পান করতে পারে কিন্তু তা পানির প্রতি অত্যধিক আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে যা, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।[২৫][২৬] একজন ব্যক্তির দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে যে ধারণা বহুল প্রচলিত, বিজ্ঞানে সম্ভবত তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।[২৭] একইভাবে দেহের ওজনহ্রাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে পানির উপকারিতা বিষয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে তাও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে খারিজ হয়ে গেছে।[২৮]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

টীকা

[সম্পাদনা]

    তথ্যসূত্র

    [সম্পাদনা]
    1. "10.2: Hybrid Orbitals in Water"Chemistry LibreTexts (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মার্চ ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১
    2. Henniker, J. C. (১৯৪৯)। "The Depth of the Surface Zone of a Liquid"।Reviews of Modern Physics২১ (2)।Reviews of Modern Physics:৩২২–৩৪১।ডিওআই:10.1103/RevModPhys.21.322
    3. Pollack, Gerald।"Water Science"University of Washington, Pollack Laboratory। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১Water has three phases – gas, liquid, and solid; but recent findings from our laboratory imply the presence of a surprisingly extensive fourth phase that occurs at interfaces.
    4. Bramer, Scott।"Chemical Nomenclature"। Widener University, Department of Chemistry। ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১
    5. "CIA- The world fact book"Central Intelligence Agency। ৫ জানুয়ারি ২০১০ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০০৮
    6. "United Nations"। Un.org। ২২ মার্চ ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১০
    7. 12Gleick, P.H., সম্পাদক (১৯৯৩)।Water in Crisis: A ৌ to the World's Freshwater Resources। Oxford University Press। পৃ. ১৩, Table ২.১ "Water reserves on the earth"।
    8. Water Vapor in the Climate Systemওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০ মার্চ ২০০৭ তারিখে, Special Report, [AGU], December 1995 (linked 4/2007).Vital Waterওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৮ জুলাই ২০০৯ তারিখে UNEP.
    9. "MDG Report 2008"(পিডিএফ)। ২৭ আগস্ট ২০১০ তারিখেমূল থেকে(পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১০
    10. "Public Services"ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৭ এপ্রিল ২০১২ তারিখে, Gapminder video
    11. Kulshreshtha, S.N (১৯৯৮)। "A Global Outlook for Water Resources to the Year 2025"।Water Resources Management১২ (3):১৬৭–১৮৪।ডিওআই:10.1023/A:1007957229865{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}:|সংগ্রহের-তারিখ= এর জন্য|ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)
    12. "Charting Our Water Future: Economic frameworks to inform decision-making"(পিডিএফ)। ৫ জুলাই ২০১০ তারিখেমূল থেকে(PDF) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১০
    13. Baroni, L.; Cenci, L.; Tettamanti, M.; Berati, M. (২০০৭)।"Evaluating the environmental impact of various dietary patterns combined with different food production systems"European Journal of Clinical Nutrition৬১ (2):২৭৯–২৮৬।ডিওআই:10.1038/sj.ejcn.1602522পিএমআইডি 17035955{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
    14. সংসদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান। কলকাতা: শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড। এপ্রিল ১৯৮৯। পৃ. ৫৬১।{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বছর (লিঙ্ক)
    15. বিশ্বাস, শৈলেন্দ্র (১ জানুয়ারি ২০০০)।"সংসদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান ৩য় সংস্করণ"। ১১ জুন ২০২০ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৭
    16. বিশ্বাস, শৈলেন্দ্র (১ জানুয়ারি ২০০৪)।"সংসদ বাংলা অভিধান ৭ম সংস্করণ"। ১১ জুন ২০২০ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৭
    17. Weird water lurking inside giant planets, New Scientist,01 September 2010, Magazine issue 2776.
    18. Braun, Charles L. (১৯৯৩)।"Why is water blue?"J. Chem. Educ.৭০ (8): ৬১২।ডিওআই:10.1021/ed070p612। ৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২
    19. Campbell, Neil A. (২০০৬)।Biology: Exploring Life। Boston, Massachusetts: Pearson Prentice Hall।আইএসবিএন ০-১৩-২৫০৮৮২-৬। ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২
    20. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, তুষারকান্তি ষন্নিগ্ৰহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, এপ্রিল,১৯৮৬, পৃঃ ৫৬
    21. 12"WBCSD Water Facts & Trends"। ১ মার্চ ২০১২ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১০
    22. Re: What percentage of the human body is composed of water? Jeffrey Utz, M.D., The MadSci Network
    23. "Healthy Water Living"। BBC। ২৩ এপ্রিল ২০০৮ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭
    24. Rhoades RA, Tanner GA (২০০৩)।Medical Physiology (2nd সংস্করণ)। Baltimore: Lippincott Williams & Wilkins।আইএসবিএন ০৭৮১৭১৯৩৬৪ওসিএলসি 50554808
    25. Noakes TD, Goodwin N, Rayner BL; এবং অন্যান্য (১৯৮৫)।"Water intoxication: a possible complication during endurance exercise"Med Sci Sports Exerc১৭ (3):৩৭০–৩৭৫।পিএমআইডি 4021781{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}:|লেখক=-এ "et al." এর সুস্পষ্ট ব্যবহার (সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
    26. Noakes TD, Goodwin N, Rayner BL, Branken T, Taylor RK (২০০৫)। "Water intoxication: a possible complication during endurance exercise, 1985"।Wilderness Environ Med১৬ (4):২২১–৭।ডিওআই:10.1580/1080-6032(2005)16[221:WIAPCD]2.0.CO;2পিএমআইডি 16366205{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
    27. "Drink at least eight glasses of water a day." Really? Is there scientific evidence for "8 × 8"?ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০ এপ্রিল ২০১০ তারিখে by Heinz Valdin, Department of Physiology, Dartmouth Medical School, Lebanon,New Hampshire
    28. Drinking Water – How Much?ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ১০ এপ্রিল ২০১২ তারিখে, Factsmart.org web site and references within
    উইকিমিডিয়া কমন্সেপানি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
    এই নিবন্ধটিঅসম্পূর্ণ। আপনি চাইলেএটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন।
    'https://bn.wikipedia.org/w/index.php?title=পানি&oldid=8540299' থেকে আনীত
    বিষয়শ্রেণীসমূহ:
    লুকানো বিষয়শ্রেণী:

    [8]ページ先頭

    ©2009-2025 Movatter.jp