ধ্যান হ'ল এক ধরনের অনুশীলন যেখানে কোনও ব্যক্তি কিছু কৌশল যেমন মননশীলতা, বা কোনও নির্দিষ্ট বিষয়, চিন্তা বা কাজের প্রতি মনোনিবদ্ধকরণ এর মাধ্যমে মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং স্বচ্ছ মানসিক এবং শান্তিপূর্ণ আবেগী এবং স্থিতিশীল অবস্থা অর্জন করতে পারে।[১]:২২৮–২৯[২]:১৮০[৩]:৪১৫[৪]:১০৭[৫][৬] বিশেষজ্ঞদের মতে ধ্যানের সংজ্ঞা দেওয়াটা মুশকিলই বটে। কারণ, ঐতিহ্যভেদে এর কৌশলে নানারূপ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
বিভিন্ন ধর্মে সুপ্রাচীনকাল থেকেই আধ্যাত্মিকতার অংশ হিসেবে ধ্যানের অনুশীলন ও চর্চা হয়ে আসছে। মেডিটেশনের (ধ্যান) প্রথম দিকের তথ্যসমূহ,বেদান্তবাদীহিন্দু ঐতিহ্য থেকে পাওয়া যায়। উনিশ শতক থেকে এশিয়ান এইসব মেডিটেশনের কৌশল মোটামুটি অন্য সব সংস্কৃতিতে বিস্তার লাভ করে এবং এটি আধ্যাত্মবাদ ছাড়া অন্য কিছু কর্মকাণ্ড যেমন, স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক উন্নতি প্রভৃতির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে থাকে।
মেডিটেশন তথা ধ্যানের ব্যবহার হতে পারে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা, যন্ত্রণা ইত্যাদি হ্রাস করতে এবং শান্তি, উপলব্ধি,[৭] আত্মবিশ্বাস এবং সুস্থতা বাড়ানোর লক্ষ্যে।[৮][৯][১০][১১] এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য (মনস্তাত্ত্বিক, স্নায়বিক এবংকার্ডিওভাসকুলার) এবং অন্যান্য বিষয়ক প্রভাবসমূহ নিয়ে সাম্প্রতিককালে গবেষণা চলছে।
সুনির্দিষ্টভাবে কবে ধ্যানের উৎপত্তি হয়েছিল তা অজানা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ একমত যে তা প্রায় ৫০০০ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করেছিল। ধ্যানচর্চার সবচেয়ে প্রাচীন দলিল পাওয়া যায় প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেরবেদে।টাও ওবুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতির বিকাশ ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০-৫০০ সালে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-১০০ সালেপতঞ্জলির যোগ সূত্র প্রণীত হয় যেখানেঅষ্টাঙ্গা ধ্যানের বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ - ২০০ সালেভগবদ গীতা লিখিত হয় যেখানে যোগ, ধ্যান এবংআধ্যাত্মিক জীবন যাপনের পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে প্রথম ধ্যান হল খোলা হয়। অষ্টাদশ শতকে ধ্যানের প্রাচীন শিক্ষার অনুবাদ পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। বিংশ শতকে ধ্যানের বিভিন্ন মেথড উদ্ভাবিত হয়।[১২]
ইংরেজি meditation শব্দটি প্রাচীন ফরাসিmeditacioun থেকে এসেছে। আবার ল্যাটিন শব্দmeditatio এসেছে ক্রিয়াপদmeditari থেকে যার অর্থ চিন্তা করা, মনযোগ দেওয়া, কল্পনা করা ইত্যাদি।[১৩][১৪] একটি আনুষ্ঠানিক এবং ধাপে ধাপে অনুশীলনীয় ক্রিয়া হিসেবে মেডিটিটিও শব্দটির ব্যবহার দ্বাদশ শতাব্দীর সন্ন্যাসী গুইগো দ্বিতীয়র কাছ থেকে পাওয়া যায়।[১৫]
এইসব ঐতিহাসিক ব্যবহার ছাড়াও meditation শব্দটি পূর্বাঞ্চলীয় আধ্যাত্মবাদী অনুশীলন হিসেবেও পরিচিত ছিল; হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মে যাকে ধ্যান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ধ্যান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ধ্যা থেকে; যার অর্থ মনোনিবদ্ধ করণ, ধ্যানে নিমজ্জন। [১৬] আবারসংস্কৃত "যোগ" শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। এটি সংস্কৃত "যুজ" ধাতু থেকে ব্যুৎপন্ন, যার অর্থ "নিয়ন্ত্রণ করা", "যুক্ত করা" বা "ঐক্যবদ্ধ করা"। "যোগ" শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তাই "যুক্ত করা", "ঐক্যবদ্ধ করা", "সংযোগ" বা "পদ্ধতি"। সম্ভবত "যুজির্সমাধৌ" শব্দটি থেকে "যোগ" শব্দটি এসেছে, যার অর্থ "চিন্তন" বা "সম্মিলন"। দ্বৈতবাদী রাজযোগের ক্ষেত্রে এই অনুবাদটি যথাযথ। কারণ উক্ত যোগে বলা হয়েছে চিন্তনের মাধ্যমেপ্রকৃতি ওপুরুষের মধ্যে ভেদজ্ঞান জন্মে।
যিনি যোগ অনুশীলন করেন বা দক্ষতার সহিত উচ্চমার্গের যোগ দর্শন অনুসরণ করেন, তাকেযোগী বাযোগিনী বলা হয়।
এছাড়া মেডিটেশন শব্দটি দ্বারা ইসলামের সূফিবাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলন[১৭] অন্যান্য ঐতিহ্যের অনুশীলনসমূহ যেমন ইহুদীদের কাবালাহ এবং খ্রিস্টান হেসিচামস সম্পর্কিত রীতিগুলিকেও বোঝানো যেতে পারে।[৪]
অভিধানসমূহ ল্যাটিন অর্থ "গভীরভাবে চিন্তা করা"; পাশাপাশি জনপ্রিয় ব্যবহারিক অর্থসমূহ যেমন "সময় ধরে মনকে কেন্দ্রীভূত করা,[৬] "শুধুমাত্র একটি বিষয়ের প্রতি আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করা চাই তা ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ হিসাবে হোক বা শান্ত ও স্বচ্ছন্দ হওয়ার উপায় হিসাবে হোক ",[১৮] এবং আধ্যাত্মিক চৈতন্যের উচ্চস্তরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মানসিক অনুশীলনে (যেমন কারও শ্বাস ফেলা বা মন্ত্রের পুনরাবৃত্তিতে মনোনিবেশ করা) নিযুক্ত হওয়।[৫]
আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায়, ধ্যানকে বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে অনেকে মনোযোগের ভূমিকার উপর জোর দিয়ে থাকেন[১][২][৩][৪] এবং ধ্যানের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্ম হিসেবে বলেন, "বিবাদমূলক চিন্তাভাবনা"[১৯] বা "যুক্তি"কে ছাড়িয়ে গিয়ে[২০] আরও গভীর, আরও ধর্মভীরু বা আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় অবস্থা অর্জনের প্রচেষ্টা।[২১]
পশ্চিমে, মেডিটেশনের অনুশীলনসমূহকে কখনও কখনও বড় দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:মনোনিবশনমূলক ধ্যান এবং উন্মুক্ত পর্যবেক্ষণমূলক (বা মননশীলতা) ধ্যান।[২২]
মানসিক মনোযোগের পদ্ধতি .... একজন অনুশীলনকারী গভীরভাবে একটি বিশেষ বস্তুর ওপর মনযোগ ধরে রাখার অনুশীলন করতে পারে(একে বলেমনোনিবশনমূলক ধ্যান); অথবা কিছু কাজের ওপর সে মনযোগের অনুশীল করতে পারে যেগুলোতে পূর্ণ চেতনায় থাকতে হয় (একেই বলে মননশীলতার ধ্যান) অথবা দুটো বিষয়েই ধ্যানের অনুশীলন করতে পারে।[২৩]:১৩০[২৪]
মনোনিবেশমূলক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে, শ্বাস-প্রশ্বাস, কোনো চিন্তা বা অনুভূতি (যেমন মৈত্রিপূর্ণ মনোভাব, ভালোবাসা-দয়া, বন্ধুত্ব, সৌভাগ্য ইত্যাদি) বা কোআন (বিশেষ ধরনের ধাঁধাসমূহ) অথবা মন্ত্র ইত্যাদির প্রতি মনোযোগ প্রদান করা।[২৫]
উন্মুক্ত মননশীলতার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে পূর্ণ মননশীলতার চর্চা (চেতনা জাগ্রত করার বিশেষ পদ্ধতি), শিকানতাযা (বিশেষ ধরনের নীরবতার সাধনা)।[২৬] উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করে অভ্যাস[২৭][২৮][২৯] করার ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যগুলি হল, বিপশ্যনা, শমথ প্রভৃতি।[৩০][৩১]
"চিন্তাহীন" পদ্ধতিতে, "অনুশীলনকারী পুরোপুরি সজাগ, সচেতন থাকে এবং নিজস্ব অনুষঙ্গসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখেন তবে কোনও অযাচিত চিন্তাভাবনা অনুভব করেন না। "[৩২] এই পদ্ধতিতে চিন্তাকে বিচার করা বন্ধ করতে হয় এবং চিন্তা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্নই হয়ে যেতে হয়। তবে চিন্তাভাবনাগুলি থামিয়ে দেওয়া এর লক্ষ্য নয়।[৩৩] সাহাজা যোগ সাধনায় চিন্তা ভাবনা বন্ধ রাখাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আলোক উজ্জ্বল যোগ সাধনারও উদ্দেশ্য হল চিন্তাশূণ্য মানসিক অবস্থা তৈরি যে অবস্থাকে হুইনেঙ্গ[৩৪] এবং ইয়াওশান য়েইয়ান (ইংরেজি: Yaoshan Weiyan) কর্তৃক চিন্তাহীন অবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আরেকটি গবেষণা এও বলছে যে, মন্ত্রপাঠাধ্যান (ইংরেজি: transcendental meditation) এবং এরকম আরও কিছু ধ্যানকে স্বয়ংক্রিয় সেলফ ট্রান্সেন্ডিং কৌশল (ইংরেজি: Automatic self-transcending technique) অন্য আরও কিছু শ্রেণিবিভাগে অবশ্য মেডিটেশনকে মনোনিবেশমূলক, উৎপাদী, গ্রাহী এবং প্রতিক্ষেপণীয় অনুশীলন নামে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।[৩৫]
ট্রান্সসেন্টেন্টাল মেডিটেশন কৌশলে প্রতিদিন ২০ মিনিট দুবার অনুশীলনের পরামর্শ দেয়া হয়।[৩৭] কিছু কৌশল কম সময় প্রস্তাব করা হয়,[২৭] বিশেষ করে ধ্যান শুরু করার সময়।[৩৮] এছাড়া রিচার্ড ডেভিডসন গবেষণার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, প্রতিদিন মাত্র ৮ মিনিট অনুশীলন করে অনেক উপকার পাওয়া যায়,[৩৯] কিছু ধ্যানকারী দীর্ঘকাল ধরে অনুশীলন করেন,[৪০][৪১] বা বিশেষত যখন কোনও কোর্সে বা আধ্যাত্মিক সন্নাসস্থলে যান।[৪২] কিছু ধ্যানকারীরা ভোর হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে অনুশীলনকে সেরা মনে করেন।[৪৩]
পেরুভিয়ান স্কুলে ধ্যানের অনুশীলন করা ছোট বাচ্চারা
যোগ-আসনসমূহ যেমন, পূর্ণ পদ্মাসন, অর্ধ পদ্মাসন, বর্মি, সিইজা এবং হাঁটুর বিভিন্ন অবস্থান বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু ধর্মে বেশ জনপ্রিয়।[৪৪] যদিও অন্যান্য কিছু আসন যেমন, উপবেশন, শয়ন, দণ্ডয়ন ইত্যাদিরও ব্যবহারও রয়েছে। মেডিটেশন মাঝে মাঝে হাঁটার সময়ও করা হয়; যাকে কিনহিন বলা হয়। তাছাড়া সহজ কোনও কাজ মনোযোগ দিয়ে করার সময়ও করা যায়; যাকে সামু বলা হয়। শুয়ে থাকা অবস্থায়ও করা যায়; যাকে বলে শবাসন বলা হয়।[৪৫][৪৬]
কিছু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভক্তিপূর্ণ ধ্যানের জন্য তসবিহ জাতীয় প্রার্থনা-পুঁতি সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করার রীতি রয়েছে।[৪৭][৪৮][৪৯] বেশিরভাগ তসবিহ ও খ্রীস্টানদের রোসারি জপমালাগুলো কিছু পুঁতি একটা সুতো দিয়ে একসঙ্গে যুক্ত করে তৈরি। রোমান ক্যাথলিক আমলেরজপমালায় একটি তসবির ছড়ায় ছোট ছোট পাঁচ ধরনের দশটি করে পুঁতি থাকতো। হিন্দু জপ মালার ১০৮ টি দানা রয়েছে (১০৮ অঙ্কটির মধ্যে আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে, সেইসাথেজৈন ধর্ম এবং বৌদ্ধ প্রার্থনার পুঁতিতেও এর ব্যবহার রয়েছে।[৫০] কোনও ব্যক্তি একটিমন্ত্র পাঠ করে একটি করে পুঁতি গণনা করে এভাবে পুরো এক চক্কর মন্ত্র পাঠ করে। মুসলিম মিসবাহ নামক তসবিহতে 99 টি পুঁতি রয়েছে।
বৌদ্ধ সাহিত্যের আধ্যাত্মবাদের অনেক গল্প রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে, শিষ্যরা ধ্যানে বসলে গুরুরাই ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাতেন। টি. গ্রিফিথ ফোকের মতে, উৎসাহ বৃদ্ধিজনিত এই বিঘ্নতা জেন অনুশীলনের (উপর্যুক্ত কোআন তথা বিশেষ জটিল ধাঁধাঁ শোনার অনুশীলন) একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। রিচার্ড ডেভিডসন এই মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, একটি বাণী প্রতিদিনের অনুশীলন বজায় রাখা সহজ করে দেয়।[৩৯] উদাহরণস্বরূপ তিনি নিজে এই শিক্ষার প্রতি অবনত হয়েছেন যে, "প্রাথমিকভাবে আমার সুবিধার জন্য নয়, অন্যের উপকারের জন্য"।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ধ্যানের অনেক পদ্ধতি এবং শৈলী রয়েছে।[৫১] প্রাক-আধুনিক এবং ঐতিহ্যগত হিন্দুধর্মে,যোগব্যায়াম এবংধ্যান মূলত চর্চা করা হয় নিজের পরমাত্মা বাআত্মার ঐক্য বুঝতে।হিন্দু দর্শনে যোগ ছয়টিমূল দার্শনিক শাখার একটি। যোগ শাখাটিসাংখ্য শাখাটির সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
নিয়ম পদ্ধতির ভিন্নতা অনুসারে হিন্দু ধ্যানে প্রকারভেদ বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকার হলঃ
হিন্দু সাহিত্যে ধ্যানের প্রথম স্পষ্ট উল্লেখগুলির মধ্যেউপনিষদ এবংমহাভারতে (ভগবদ গীতা সহ) উল্লেখ পাওয়া যায়।[৫২][৫৩] গ্যাভিন ফ্লাডের মতে প্রাচীনবৃহদারণ্যক উপনিষদ ধ্যানের বর্ণনা দিচ্ছে এভাবে যে, "শান্ত ও মনোনিবেশিত হয়ে কেউ তার নিজের মধ্যে আত্মাকে অনুধাবন করে"।[৫১]
শাস্ত্রীয় হিন্দু যোগসাধনায় সবচেয়ে প্রভাবশালী লিপি হলপতঞ্জলির 'র যোগ সূত্র (৪০০ খ্রিষ্টাব্দ),যা মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়, তাকেরাজযোগ বা অষ্টাঙ্গযোগ নামে চিহ্নিত করা হয় অষ্টাঙ্গযোগ কৈবল্য (একাকিত্ব) এর দিকে ধাবিত করে। পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগগুলো হচ্ছে-
পবিত্রতা, সন্তুষ্টি, তপস্যা, সাধ্যায় ও ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ। 'যম' ও 'নিয়ম' এ দুয়েরই উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয় ও চিত্তবৃত্তিগুলিকে দমন করা এবং এগুলিকে অন্তর্মুখী করে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করা।
যোগ অভ্যাস করার জন্য যে ভঙ্গিমায় শরীরকে রাখলে শরীর স্থির থাকে অথচ কোনোরূপ কষ্টের কারণ ঘটেনা তাকে আসন বলে। সংক্ষেপে স্থির ও সুখজনকভাবে অবস্থান করার নামই আসন।
বাইরের বিষয়গুলি থেকে ইন্দ্রিয়কে সরিয়ে আনা। আসন ও প্রাণায়ামের সাহায্যে শরীরকে নিশ্চল করলেও ইন্দ্রিয় ও মনের চঞ্চলতা সম্পূর্ণ দূর নাও হতে পারে। এরূপ অবস্থায় ইন্দ্রিয়গুলোকে বাহ্যবিষয় থেকে প্রতিনিবৃত্ত করে চিত্তের অনুগত করাই হল প্রত্যাহার।
মনকে ধ্যেয় বিষয়ে বিলীন করা। যে বিষয়ে চিত্ত নিবিষ্ট হয়, সে বিষয়ে যদি চিত্তে একাত্মতা জন্মায় তাহলে তাকে ধ্যান বলে। এই একাত্মতার অর্থ অবিরতভাবে চিন্তা করতে থাকা।
ধ্যেয়ের সঙ্গে চৈতন্যের বিলোপসাধন। ধ্যান যখন গাঢ় হয় তখন ধ্যানের বিষয়ে চিত্ত এমনভাবে নিবষ্ট হয়ে পড়ে যে, চিত্ত ধ্যানের বিষয়ে লীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ধ্যান রূপ প্রক্রিয়া ও ধ্যানের বিষয় উভয়ের প্রভেদ লুপ্ত হয়ে যায়। চিত্তের এই প্রকার অবস্থাকেই সমাধি বলে। এই সমাধি প্রকার - সবিকল্প এবং নির্বিকল্প। সাধকের ধ্যানের বস্তু ও নিজের মধ্যে পার্থক্যের অনুভূতি থাকলে, তাকে বলা হয় সবিকল্প সমাধি। আবার সাধক যখন ধ্যেয় বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান সে অবস্থাকে বলা হয় নির্বিকল্প সমধি। তখন তাঁর মনে চিন্তার কোনো লেশমাত্র থাকে না। এই সমাধি লাভ যোগসাধনার সর্বোচ্চ স্তর, যোগীর পরম প্রাপ্তি।
হিন্দু মেডিটেশনের পরবর্তী উন্নয়নের মধ্যে হঠ যোগা প্রদীপিকার মতো হঠ যোগা (বলপূর্বক যোগ) সংকলন, ভক্তি যোগের বিকাশকে মেডিটেশন এবংতন্ত্রের একটি প্রধান রূপ হিসাবে গণ্য হয়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু যোগ পাঠ্য হ'ল যোগ যজ্ঞবল্ক্য, যা হথ যোগ এবং বেদন্ত দর্শনকে ব্যবহার করে।
যে আসনে মহাবীর সর্বজ্ঞান অর্জন করেছেন বলে জানা যায়
জৈনধর্মের ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন পদ্ধতিকে মোক্ষলাভের পথ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এররত্নত্রয় নামে তিনটি অংশ রয়েছে: সঠিক ধারণা-বিশ্বাস, সঠিক জ্ঞান এবং সঠিক আচরণ।[৫৪] জৈন ধর্মে ধ্যান করার লক্ষ্য, আত্মকে উপলব্ধি করা, পরিত্রাণ লাভ করা এবং আত্মাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় নিয়ে যাওয়া।[৫৫] এর উদ্দেশ্য আত্মার শুদ্ধ অবস্থানে পৌঁছা যাকে বিশুদ্ধ চেতনা বলে, যা কোনও সম্পর্ক বা বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে। অনুশীলনকারী কেবল একজন জ্ঞানবান-দ্রষ্টা (গায়্তা-দ্রষ্টা) হওয়ার চেষ্টা করেন। জৈন মেডিটেশনকেধার্ম্য ধ্যান এবংশুক্লধ্যানায় বিস্তৃতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
বৌদ্ধধর্মের ধ্যান ধর্ম ওবৌদ্ধধর্মের দর্শন সংশ্লিষ্ট ধ্যান চর্চাকে বোঝায়। এর মূল ধ্যানের কৌশলগুলি প্রাচীনবৌদ্ধ লিপিগুলিতে সংরক্ষিত আছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রসারিত হয়ে আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জাগরণ এবংনিভৃত্যের দিকে যাত্রাপথের অংশ হিসাবে ধ্যানের নিয়মাবলি অনুসরণ করেন।[note ১] বৌদ্ধ ধর্মের শাস্ত্রীয় ভাষাগুলিতে ধ্যানের বিপরীতে নিকটতম ব্যবহৃত শব্দগুলি হলভবানী,[note ২]ঝর্ণা /ধ্যান,[note ৩] এবংবিপাসনা।
বৌদ্ধ ধ্যানের কৌশলগুলি বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক ভিন্নধর্মাবলম্বীগণও একে ধারণ করতে শুরু করেছেন। ধ্যানমূলক অনুশীলনগুলিতে যথেষ্ট সমতা রয়েছে- যেমন শ্বাস ধ্যান এবং বিভিন্নপুনরুদ্ধার (আনুসাতি)।থেরভদা ঐতিহ্যেমননশীলতার বিকাশের জন্য পঞ্চাশেরও বেশি পদ্ধতি রয়েছে এবং একাগ্রতা বিকাশের জন্য চল্লিশটি পদ্ধতি রয়েছে,তিব্বতি ঐতিহ্যে হাজার হাজার দৃশ্যায়ন ধ্যান রয়েছে।[note ৪] বেশিরভাগ ক্ল্যাসিক এবং সমসাময়িক বৌদ্ধ ধ্যানের নিয়মাবলি নির্দিষ্ট স্কুলে নির্দিষ্ট ধরনের হয়ে থাকে।[note ৫]
থেরবাদ ও সর্ব্বস্তিবাদের ঐতিহ্য এবং তিব্বতী ঐতিহ্য অনুসারে,[৫৬] বুদ্ধ(গৌতম বুদ্ধ) ধ্যান চর্চা থেকে উদ্ভূত দুটি প্রধান মানসিক গুণ চিহ্নিত করে গেছেন:
"নির্মলতা" বা "প্রশান্তি" (পালি:সমথ) যে গুণ স্থিরতা প্রদান করে, একীভূত করে এবং মনকে কেন্দ্রীভূত করে;
"অন্তর্দৃষ্টি" (পালি:বিপাসনা) যা কাউকে দেখতে, অন্বেষণ করতে এবং "আকার" উপলব্ধি করতে সক্ষম করে।[৫৭]
আধুনিক যুগে এশিয়ান বৌদ্ধধর্মের উপর আধুনিকতার ছাপ এবং জেন এবং বিপাসনা অনুশীলনের প্রতি পশ্চিমাদের আগ্রহের কারণে বৌদ্ধ ধ্যান ক্রমবর্ধমান হারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে বৌদ্ধ ধ্যানের প্রচার পশ্চিমে বৌদ্ধধর্মের প্রসারের সমান্তরালে বাড়ছে। মননশীলতার(বৌদ্ধ শব্দসতী থেকে উদ্ভূত) আধুনিকীকরণের ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট ধ্যানচর্চাগুলি পরিবর্তিতভাবে মাইন্ডফুলনেস ভিত্তিক থেরাপির দ্বার উন্মোচন করে।
শিখ ধর্মে, ভক্তের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সিমরান (ধ্যান) এবং সৎকর্ম উভয়ই প্রয়োজনীয়;[৫৮] ভাল কাজ ছাড়া ধ্যান নিরর্থক। শিখরা যখন ধ্যান করে তখন তাদের লক্ষ্য ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করা এবং ঐশ্বরিক আলোতে নিমজ্জিত হওয়া।[৫৯] কেবলমাত্র ঐশ্বরিক ইচ্ছা বা আদেশেই ভক্তকে ধ্যান করতে আগ্রহী করে।[৬০] নাম জপা বলে ঈশ্বরের নাম বা মহৎ গুণাবলি আওড়ানোর রীতিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।[৬১]
"আলোক জড়ো করা",সোনার ফুলের রহস্য থেকে তাওবাদী ধ্যান
তাওবাদী ধ্যান তার দীর্ঘ ইতিহাসে মনোনিবেশ, দৃশ্যায়ন,কিউই চাষ, মনন এবং মননশীলতার মেডিটেশনসহ বিভিন্ন কৌশল বিকাশ করেছে। ঐতিহ্যবাহী তাওবাদী ধ্যানমূলক অনুশীলনসমূহ প্রায় ৫ম শতাব্দী থেকে চীনা বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল এবং ঐতিহ্যবাহী চৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্র এবংচৈনিক মার্শাল আর্টকে প্রভাবিত করেছিল।
লিভিয়া কোহন তিনটি মৌলিক ধরনের তাওবাদী ধ্যানকে পৃথক করেন: "কেন্দ্রীকরণ", "অন্তর্দৃষ্টি" এবং "ভিজ্যুয়ালাইজেশন"।[৬২]ডিং (চাইনিজ:定, আক্ষরিক অর্থ "সিদ্ধান্ত গ্রহণ; স্থিতিঅর্জন; স্থিতিশীলতা") যার ব্যবহারিক অর্থ "গভীরভাবে মনোনিবশন", "একাগ্রভাবে চিন্তন" বা "নিখুঁতভাবে অবগাহন"। (চাইনিজ:觀, আক্ষরিক অর্থ "দেখো, পর্যবেক্ষণ করো, তাকাও") যার ব্যবহারিক অর্থ এমন ধ্যান যা ডাও (ইংরেজি: Dao) এর সঙ্গে একীভবন এবং নিমজ্জনের কথা বলে। এই পদ্ধতিতাং রাজবংশের (৬১৮-৯০৭) তাওবাদী শিক্ষাগুরুদের হাতে বিকশিত হয়। এই পদ্ধতির ভিত্তি ছিলবিপাসনা ("অন্তর্দৃষ্টি" বা "জ্ঞান")-ধ্যান এরটিয়ানটাই নামক বৌদ্ধ অনুশীলন।কুন (চাইনিজ:存, আক্ষরিক অর্থ "বিদ্যমান; উপস্থিত; অস্তি") যাতে অস্তিত্বের কারণ ঘটানো বা, অস্তিত্বে আনয়ন করা এজাতীয় মর্ম পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি তাওবাদী শ্যাংকিং এবং লিঙ্গবাও বিদ্যালয়গুলো দ্বারা জনপ্রিয়তা লাভ করে। একজন ধ্যানকারী তাদের দেহের অভ্যন্তরে সৌর এবং চন্দ্রের নির্যাস, নির্মল আলো এবং দেবদেবীদের কল্পনা করে বা অস্তিত্ব অনুভব করে, যা সম্ভবত স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু দান করে এমনকিজিয়ান (চাইনিজ: 僊, "অমরত্ব" প্রাপ্তিও ঘটে) খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকেগুয়ানজি প্রবন্ধনিই (অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ) হলকি চাষ এবং শ্বাস-নিয়ন্ত্রণের ধ্যান কৌশল বিষয়ে খুঁজে পাওয়া সর্বাধিক প্রাচীন রচনা।[৬৩]
উদ্ধৃতি, "যখন তুমি তোমার মনকে প্রশস্ত করো এবং একে ছেড়ে যাও, যখন তুমি তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে নাও এবং একে লম্বা করো, যখন তোমার শরীর শান্ত এবং স্থির: এবং তুমি এককে বজায় রাখতে পারো এবং অগণিত ঝামেলা ঝেড়ে ফেলতে পারো... একেই বলে "শ্বাস-চক্রায়ন": তোমার চিন্তাভাবনা এবং কাজ মনে হবে স্বর্গীয়।"[৬৪]
(সি. খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী) তাওবাদী (ইংরেজি:Zhuangzi) লিপিবদ্ধ করেনzuowang বা "বিস্মরণ উপবেশন" ধ্যান।কনফুসিয়াস তাঁর শিষ্য ইয়ান হুইকে "বসো এবং ভুলে যাও" এর অর্থটি ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে বলেন: "আমি আমার অঙ্গগুলি এবং দেহকাণ্ড স্লথ করি, বুদ্ধি ম্লান করি, আমার রূপ হতে বিচ্ছিন্ন হই, জ্ঞানকে পিছনে ছেড়ে যাই এবং যাত্রাপথের সাথে অভিন্ন হয়ে যাই"।[৬৫]
তাওবাদী ধ্যানের অনুশীলনগুলিচীনা মার্শাল আর্টের (এবং কিছু জাপানি মার্শাল আর্ট) কেন্দ্রীয় বিষয়, বিশেষতকি- সম্পর্কিতনেজিয়ার "অভ্যন্তরীণ মার্শাল আর্ট"। কিছু সুপরিচিত উদাহরণ হল,daoyin "পথনির্দেশন এবং কর্ষণ",qigong "জীবন-শক্তি ব্যায়াম",neigong, "অভ্যন্তরীণ ব্যায়াম"neidan "অভ্যন্তরীণ আল-কেমি", এবংtaijiquan "বিখ্যাত চূড়ান্ত মুষ্টিযুদ্ধ", যাকে চলমান ধ্যান বা (ইংরেজি: moving meditation বলে মনে করা হয়।[২৯]
ইহুদী ধর্ম হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানমূলক অনুশীলনগুলি ব্যবহার করে আসছে।[৬৬][৬৭] উদাহরণস্বরূপ,তাওরাতে পিতৃপুরুষইসহাক মাঠের"לשוח" (লাসুয়াচ) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে - সমস্ত ভাষ্যকারদের মতে এই বিশেষণের অর্থ কোনো ধরনের ধ্যানমূলক অনুশীলন (আদিপুস্তক ২৪:৬৩[৬৮] একইভাবে,তানখ (হিব্রুবাইবেল) জুড়ে এমন অনেক ইঙ্গিত রয়েছে যা নবীগণ ধ্যানের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।[৬৯]ওল্ড টেস্টামেন্টে মেডিটেশনের জন্য দুটি শব্দ আছে:Haga (হিব্রু ভাষায়:הגה) যার অর্থ দীর্ঘশ্বাস নেওয়া অথবা গুণগুণ করা, কিন্তুধ্যানও করা এবংsîḥâ (হিব্রু ভাষায়:שיחה), মনোরঞ্জন করা, বা মনে মনে মহড়া দেওয়া।[৭০]
প্রাচীন ইহুদি লিপিগুলি ধ্যানমূলক অনুশীলনকে ব্যাপক আকারে সমর্থন করে যা প্রায়শইকাভানাহ তথা অভিপ্রায় সংশ্লিষ্ট। রাব্বিনিক আইনের প্রথম স্তর, মিশনার বর্ণনা মতে, প্রাচীণ মণিষিগণ প্রার্থনার আগে এক ঘন্টা "অপেক্ষা" করতেন যাতে তারা সর্বত্র বিরাজমান মহাসত্তার প্রতি নিজেদের আত্মাকে নিবিষ্ট করতে পারে(মিশন বেরেকোট 5: 1)। অন্যান্য প্রাক রাব্বিনিক লিপিগুলির মধ্যে সর্বত্র ঐশ্বরিক অস্তিত্বের দৃশ্যকল্পনার কথাও এসেছে (বি.তালমুদ সানহেড্রিন 22 এ) এবং প্রতিটি শ্বাসের জন্য সচেতন কৃতজ্ঞতার সাথে শ্বাস নেওয়ার নির্দেশাবলীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (আদিপুস্তক রাব্বা 14: 9)।[৭১]
প্রাচীন ইহুদি ভেদবাদের মধ্যে ধ্যানের অন্যতম পরিচিত পদ্ধতিটি ছিল মারকাবা (Merkabah) এর ক্রিয়াপদ্ধতি- মারকাবা শব্দটির মূল ধাতু তিনটি অক্ষর র, ক, ব- মূলগত ভাবে অর্থ দাঁড়ায় (ঈশ্বরের) রথ বা বাহন।[৭০] কিছু ধ্যানপদ্ধতি কাব্বালাহ নামক ইহুদীদর্শন দ্বারা প্রভাবিত এবং কিছু ইহুদি কাব্বালাহকে অধ্যয়নের অন্তর্নিহিত ধ্যানক্ষেত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[৭২][৭৩][৭৪] কাব্বালা ধ্যানে প্রায়শই উর্ধ্বলোককে অন্তরচক্ষু দিয়ে দর্শন জাতীয় কর্মকাণ্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। আরেহ কাপলান যুক্তিসাপেক্ষে দাবি করেন যে, কাব্বালা ধ্যানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল, ঈশ্বরকে অনুধাবন করা এবং তাঁর সাথে মজবুতভাবে জুড়ে যাওয়া।
মেডিটেশন এখনকার সময়ের নানান জাত ও মতের ইহুদিদের মধ্যে আগ্রহের বিষয়ের পরিণত হয়েছে। আধুনিক ইহুদি অনুশীলনে, সব থেকে বহুল পরিচিত মেডিটেশন পদ্ধতিকে বলা হয় হিতবোদেবুত (hitbodedut)(התבודדות, ভিন্ন উচ্চারণে হিসবোদেবুস "hisbodedus"), এবং এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কাব্বালাবাদ, হাসিদবাদ এবং মুসসারবাদ প্রভৃতি মতবাদের লিপিসমূহে, বিশেষ করে রাব্বির হাসিদিক পদ্ধতিNachman of Breslav। হিতবোদেবুত শব্দটি হিব্রু শব্দ "বদেদ" (בודד) থেকে এসেছে, যার অর্থ একাকী থাকা।[৭৫] অন্য একটি হাসিদিক পদ্ধতি হল "হিজোবেনাস"এর হাবাদ পদ্ধতি, যা "বিনাহ"এর সিফিরার সাথে সম্পর্কিত।[৭৬] এই পদ্ধতিটি ভেদতত্ত্বের মৌলিক ধারণা ভালভাবে বোঝার জন্য একটি বিশ্লেষণাত্মক চিন্তন প্রক্রিয়া, যা হাসিদিক গ্রন্থসমূহের নীতিসমূহ অনুসরণ ও সুক্ষ্মবিশ্লেষণে সহায়তা করে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইস্রায়েলি সালান্তার রাব্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মুসসার আন্দোলন ঐসব অন্তর্দর্শন এবং আধ্যাত্মিক ধ্যানচর্চাকে গুরুত্বারোপ করে যেগুলো নৈতিক চরিত্র উন্নত করতে সাহায্য করে।[৭৭] একজন রাব্বি কনজারভেটিভ অ্যালান লিউ জোরের সাথে বলেন যে, তেশুওয়াহ (অনুতাপ) নামক প্রক্রিয়ায় মেডিটেশন তথা ধ্যানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।[৭৮][৭৯] ইহুদিজাত বৌদ্ধরা মেডিটেশনের বৌদ্ধ পদ্ধতিগুলোই গ্রহণ করেছেন।[৮০]
পিট্রেলসিনার সেন্ট পিয়ো বলেছিলেন: "বইয়ের অধ্যয়নের মাধ্যমে একজন ঈশ্বরের সন্ধান করে; ধ্যানের দ্বারা একজন তাকে খুঁজে পায়।"[৮১]
খ্রিস্টান ধ্যান প্রার্থনা বলতে বোঝানো হয় এক ধরনের অনুশীলনকে যা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য সুগঠিত প্রয়াস।[৮২] খ্রিস্টান ধ্যান হল নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা (যেমনযীশু এবংভার্জিন মেরি জড়িতবাইবেলের দৃশ্য) এর মনোনিবেশ করা এবং ঈশ্বরের প্রেমের প্রসঙ্গে এগুলোর অর্থের দিকে মনোনিবেশ করার প্রক্রিয়া।[৮৩]
রোজারি হল যিশু এবং মেরির রহস্য নিয়ে ধ্যানের জন্য একটি আচার।[৮৪][৮৫] এডমন্ড পি. ক্লোয়ানির মতে, খ্রিস্টান ধ্যান পূর্বাঞ্চলের মেডিটেশনের তুলনামূলকভাবে বিপরীত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, বাইবেলের পিতা ঈশ্বরের চিত্রিত চিত্রটি ভারতীয় শিক্ষারকৃষ্ণ বাব্রাহ্মণের ধারণার বিপরীত।[৮৬] খ্রিস্টীয় ধ্যানমন্ত্র আওড়ানোর ওপর নির্ভর করে না এবং চিন্তাভাবনা এবং গভীর মর্মকে উৎসাহিত করে। খ্রিস্টীয় ধ্যানের লক্ষ্য ঈশ্বরের প্রেমের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে আরও বাড়িয়ে তোলা যাকে খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র বলা হয়।[৮৭][৮৮]ক্যাথলিক চার্চ খ্রিস্টান এবং পূর্বাঞ্চলীয় ধ্যানের পদ্ধতির সংমিশ্রণকে নিষিদ্ধ করে।[৮৯] ২০০৩ সালে, ভ্যাটিকান ঘোষণা করে যে, "চার্চ এমন সব ধারণা এড়িয়ে যায় যা নতুন যুগের নিকটবর্তী হয়"।[৯০][৯১][৯২]
সালাত তথা নামাজ হল মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচবার করা ভক্তির বাধ্যতামূলক কাজ। এই আরাধনায় দেহ নির্দিষ্ট কিছু ভঙ্গিমার মধ্য দিয়ে যায় আর মনখুশু নামক একাগ্রতার স্তরে উন্নিত হয়।
দ্বিতীয় আরেকটি মেডিটেশন পদ্ধতি হল যিকির যার অর্থ ঈশ্বরকে স্মরণ করা এবং তার নাম উচ্চারণ করা। এটিসুফিবাদ বা ইসলামী ভেদবাদে বিভিন্ন ধ্যান কৌশলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[৯৩][৯৪] এটি সুফিবাদের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি আরেকটি শব্দ আছেফিকর (চিন্তাভাবনা) যা জ্ঞানের দিকে পরিচালিত করে।[৯৫] দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সূফীবাদের চর্চায় নির্দিষ্ট ধ্যানমূলক কৌশল অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এর অনুসারীরা শ্বাস নিয়ন্ত্রণ এবং পবিত্র শব্দের পুনরাবৃত্তি অনুশীলন করত।[৯৬]
সুফিবাদে বৌদ্ধদের মনোনিবেশন পদ্ধতির মত একটি ধ্যানচর্চার পদ্ধতির ব্যবহার হয়, যাতে অত্যন্ত তীব্রতা এবং তীক্ষ্ণ মনোনিবিষ্ট চৈতন্যের পদ্ধতি বিদ্যমান। উওয়াইসি-শাহমাকসূদি সুফি তরীকায়, উদাহরণস্বরূপ, মুরাকাবার কথা এসেছেফারসি ভাষায় যাকে তামারকুজ বলে যার অর্থ মনোনিবেশন।[৯৭]
• সুফিবাদেতাফাক্কুর অথবাতাদাব্বুর এর আক্ষরিক অর্থমহাবিশ্বউপর চিন্তন। ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা প্রাপ্তির সংবেদন জাগ্রত করে এবংহৃদয় এবংবুদ্ধি উভয়কেই মুক্ত করে, এমন অভ্যন্তরীণ বিকাশের অনুমতি দেয় যা আপাতদৃষ্টিতে জাগতিক প্রকৃতিরঅসীমের গুণমানকে গ্রহণ করে। মুসলিম শিক্ষা ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হওয়ার পরীক্ষা হিসাবে জীবনকে আলিঙ্গন করে।[৯৮]
যেসব মতবাদে জাদুবিদ্যার ব্যবহার আছে যেমন, Wicca, Thelema,নব্য প্যাগানবাদ এবং অকাল্টিজম এগুলো প্রায়ই জাদুবিদ্যাচর্চার প্রাথমিক অবস্থায় অনুসারীদের ওপর মেডিটেশন বা ধ্যানকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। এর কারণ হল, ধারণা করা হয়, জাদুবিদ্যায় প্রায়শই আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বা নিজের লক্ষ্যকে ভিজুয়ালাইজ করতে মনের একটি নির্দিষ্ট অবস্থার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবার জন্য রীতিনীতি পালনের সময় দীর্ঘক্ষণ মনোনিবেশ করার প্রয়োজ হয়। এই ধর্মাবলম্বীদের ধ্যানের অনুশীলন বলতে সাধারণত ভিজুয়ালইজেশন, মহাবিশ্ব বা উচ্চতর আত্মা থেকে শক্তি গ্রহণ, অভ্যন্তরীণ শক্তিকে পরিচালনা এবং বিভিন্ন অবচেতন অবস্থায় চলে যাওয়া ইত্যাদিকেই বোঝায়। এই ধর্মগুলিতে মেডিটেশন এবং ম্যাজিক অনুশীলনগুলি প্রায়শই একটি অপরটির সাথে মিলে মিশে যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অধুনা মেডিটেশনসমূহকে প্রায়শই পূর্বাঞ্চলীয় দর্শন, ভেদবাদ,যোগ, হিন্দু ধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হিসেবে দেখা যায়, তবুও কিছুটা পশ্চিমা প্রভাব থাকতে পারে। পাশ্চাত্যে, ধ্যান১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তার মূলধারার মূলধারা খুঁজে পায়, তখনকার যুব সমাজের অনেকেই আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদানে খ্রিস্টধর্মকে ব্যর্থ বলে মনে করে ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।[৯৯] প্রাক হিপ্পিসে আধুনিক যুগের মেডিটেশন অনুশীলনের ধরন হিসেবে বলা হয় যে, মেডিটেশন মনকে শূণ্য করে দেয় এবং একজন মানুষকে চেতনার জগতের চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত করে দেয়। এতে প্রায়শই কোনও মন্ত্রের পুনরাবৃত্তিমূলক উচ্চারণ বা কোনও বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়।[১০০]
সম্পূরক এবং ইন্টিগ্রেটিভ হেলথের গঠিত মার্কিন ন্যাশনাল সেন্টার বলেছে যে"ধ্যান একটি মন এবং দৈহিক অনুশীলন যা প্রশান্তি এবং শারীরিক শৈথিল্য করে, মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য উন্নত করে, অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করে, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য এর ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।"[১০][১০১] ২০১৪ এর একটি পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, দীর্ঘমেয়াদীসাইকিয়াট্রিক বা মেডিকেল থেরাপির মধ্য দিয়ে আসা লোকেরা দু-ছয় মাস ধরে মননশীলতার ধ্যানের অনুশীলনে উদ্বেগ, ব্যথা এবং হতাশায় সামান্য উন্নতি করতে পারে।[১০২] ২০১৭ সালে, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন একটি বৈজ্ঞানিক বিবৃতি জারি করে যে,হৃদরোগ সংক্রান্ত অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস করতে ধ্যান একটি যুক্তিসঙ্গত সংযোজন হতে পারে। এই রোগগুলির উচ্চতর মানের ক্লিনিকাল গবেষণায় ধ্যানের আরও ভাল ও প্রকৃত নিয়মসংক্রান্ত সংজ্ঞা দেওয়া দরকার।[১০৩]
সংস্থাতে আধ্যাত্মিকতা এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত সাহিত্যের ২০১০ এর একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কর্পোরেট ধ্যান কর্মসূচি বৃদ্ধি পেয়েছে।[১০৭] ২০১৬ সাল নাগাদ আমেরিকার প্রায় এক চতুর্থাংশ নিয়োগকারী চাপ হ্রাসের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।[১০৮][১০৯] যার লক্ষ্য ছিল, চাপ কমানো এবং কর্মক্ষেত্রে চাপের দরুণ সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া উন্নত করা। এটনা প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহকদের কাছে এরকম প্রোগ্রাম অফার শুরু করেছে।গুগল ২০০৭ সাল থেকে, "নিজের ভিতরে অনুসন্ধান করুন" এর মত এক ডজনেরও বেশি মননশীলতার মেডিটেশন কোর্স সরবরাহ করে আসছে, জেনারেল মিলস মাইন্ডফুল লিডারশিপ প্রোগ্রাম সিরিজ অফার করে, এমন একটি কোর্স যা মনযোগ দেওয়ার জন্য মনের ক্ষমতা বাড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন, যোগ এবং কথোপকথনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের হারবার্ট বেনসন ট্রান্সসেন্টেন্টাল মেডিটেশন কৌশল এবংতিব্বতি বৌদ্ধধর্ম সহ বিভিন্ন শাখার ধ্যানকারীদের নিয়ে একাধিক ক্লিনিকাল পরীক্ষা পরিচালনা করেন। ১৯৭৫ সালে, বেনসনরিলাক্সেশন রেসপন্স নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন যেখানে তিনিদেহ ও মন হালকা করার জন্য ধ্যানের নিজস্ব রূপরেখা প্রদান করেন।[১১০] ১৯৭০-এর দশকেও আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া ক্যারিংটন ক্লিনিক্যালি স্ট্যান্ডার্ডাইজড মেডিটেশন (সিএসএম) নামে একটি অনুরূপ কৌশল তৈরি করেছিলেন।[১১১]
নরওয়েতে, এসেম মেডিটেশন নামে আরও একটি শব্দ-ভিত্তিক পদ্ধতি ধ্যানের মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে তোলে এবং এটি বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।[১১২] বায়োফিডব্যাক প্রক্রিয়া ১৯৫০ এর দশক থেকে অনেক গবেষক মনের গভীরে প্রবেশের চেষ্টায় ব্যবহার করেছেন।[১১৩]
ধ্যানের ইতিহাস ঘনিষ্ঠভাবে ধর্মের সাথে জড়িত।[১১৪] কিছু লেখক হাইপোথিসিসও দাঁড় করেছেন যে, মনোযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি, যা ধ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতির একটি মৌলিক উপাদান, মানব জৈবিক বিবর্তনের সর্বশেষতম পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে। মেডিটেশনের প্রথম দিকের কিছু তথ্যের উল্লেখভারতেরহিন্দুবেদে পাওয়া যায়। উইলসন সর্বাধিক বিখ্যাত বৈদিক মন্ত্র "গায়ত্রী" এর অনুবাদ করেছেন: "আমরা ঐশ্বরিক সাবিত্রীর সেই আকাঙ্ক্ষিত আলোক অভিমুখে ধ্যান করি, যিনি আমাদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত করেন" (ঋগ্বেদ: মান্ডালা -৩, সুকতা -২২, রচা -10)। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৫ম শতাব্দী জুড়ে, চিনেকনফুসিয়াস এবংটাওবাদের পাশাপাশিহিন্দু ধর্ম,জৈন ধর্ম এবংভারতে প্রাথমিক বৌদ্ধ ধর্মের মাধ্যমে অন্যান্য ধরনের ধ্যানের বিকাশ ঘটে।
রোমান সাম্রাজ্যে, খ্রিস্টপূর্ব ২০ শতকের দিকে আলেকজান্দ্রিয়ার ফিলো "আধ্যাত্মিক ব্যায়াম" এর কিছু ধরনের বিষয়ে লিখেছেন; যা মনোযোগ (prosoche) এবং মনোনিবেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট।[১১৫] এবং ৩য় শতকের দিকে প্লটিনোস (Plotinus) ধ্যানের কৌশল রচনা করেন।
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীরপালি ক্যাননবৌদ্ধ ধ্যানকে মুক্তির পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করেন।[১১৬] চীনে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়েপড়ার পরে, ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরবিমলকীর্তি সূত্রের মধ্যে মেডিটেশন সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা স্পষ্টভাবে জেনের প্রতি ইঙ্গিত করে (চিনে চ্যান, ভিয়েতনামে থিয়ান এবং কোরিয়ায় সিওন নামে পরিচিত)।[১১৭] বৌদ্ধ ধর্মের সিল্ক রোড ট্রান্সমিশন অন্যান্য এশীয় দেশগুলিতে মেডিটেশনের প্রচলন ঘটায় এবং ৬৫৩ সনে সিঙ্গাপুরে প্রথম মেডিকেশনের হল চালু হয়।[১১৮] ১২২৭-এর কাছাকাছি সময়ে চীন থেকে ফিরে, ডেজেন নির্দেশনা লিখেছিলেন জাজেন এর।[১১৯][১২০]
যিকিরেরইসলামী অনুশীলনে ৮ম বা ৯ম শতাব্দীর পরে থেকে আল্লাহর ৯৯ নাম পুনরাবৃত্তি কর হত।[৯৩][৯৪] দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সূফীবাদের চর্চায় নির্দিষ্ট ধ্যানমূলক কৌশল অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এর অনুসারীরা শ্বাস নিয়ন্ত্রণ এবং পবিত্র শব্দের পুনরাবৃত্তিমূলক অনুশীলন শুরু করে। যেমন, এর মধ্যে আছে, চিশতিয়া, কাদিরিয়া প্রভৃতি তরিকা।[৯৬] ভারতীয় বা ইসলামীসুফীদের কাছাকাছি আসাটাই হয়ত খ্রিস্টান মেডিটেশনকে প্রভাবিত করে হিরিচ্যাসে রূপান্তর করে, তবে এটা প্রমাণ করা মুশকিল।[১২১][১২২] ১০ম ও ১৪শ শতাব্দীর মধ্যে হেসিকাসম নামক আরেক পদ্ধতি চালু হয়, বিশেষ করে গ্রীসের মাউন্ট অথসে।এতে যীশুর প্রার্থনা পুনরাবৃত্তি করা হয়।[১২৩]
পশ্চিমা খ্রিস্টীয় মেডিটেশন একটু ভিন্ন প্রকৃতির এতে কোনও বাক্যাংশ বা ক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করার নিযম নেই এবং এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গির প্রয়োজন নেই। পশ্চিমা খ্রিস্টীয় মেডিটেশন ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বেনিডিক্টাইন সন্ন্যাসীদের মধ্যে বাইবেল পাঠের অনুশীলন থেকে অগ্রগতি লাভ করে যা লেকটো ডিভিনা নামে পরিচিত, যার অর্থ Divine reading বা ঐশ্বরিক পাঠ। এর "মই"-র মত চারটি আনুষ্ঠানিক ধাপের সংজ্ঞা দান করেন সন্ন্যাসী দ্বাদশ শতাব্দীর ধর্মযাজক গুইগো দ্বিতীয় চারটি লাতিন শব্দে:ectio,meditatio,oratio, andcontemplatio (অর্থাৎ পড়ো, চিন্তা করো, প্রার্থনা করো, বাস্তবায়ন করো).
পশ্চিমা খ্রিস্টীয় মেডিটেশন পরে অন্যান্য সাধুগণ যেমন ষোড়শ শতাব্দীর ইগনাশিয়াস লায়োলার এবং তেরেসা অব অ্যাভিলার সাধুসন্তদের দ্বারা বিকাশিত হয়।[১২৪][১২৫][১২৬]
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে পশ্চিমে মেডিটেশন ছড়িয়ে পড়ে, বিশ্বব্যাপী সকল সংস্কৃতি মধ্যে সুসম্পর্ক এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে। সর্বাধিক বিশিষ্ট হল পশ্চিমে এশীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত অনুশীলনগুলি। এছাড়াও পশ্চিমাদের কিছু ধ্যানমূলক অনুশীলনের প্রতি আগ্রহের পুনর্জাগরণ ঘটে।[১২৭]
পূর্বাঞ্চলীয় ধ্যান সম্পর্কে ধারণাগুলি আমেরিকার জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ডুবে যাওয়া শুরু করে,[১২৮]:৩ এবং এই জাতীয় ধারণা ট্রান্সসেন্টালেন্টালিস্টদের যুগে [আমেরিকাতে] মিশে যেতে শুরু করে, বিশেষত ১৮৪০ এবং ১৮৮০-এর দশকের মধ্যে।:৩ পরের দশকগুলিতে আমেরিকাতে এই ধারণাগুলির আরও বিস্তার লাভ করেছে:
অতি সম্প্রতি, ১৯৬০ এর দশকে, ধ্যানচর্চায় পশ্চিমা আগ্রহের নতুন এক যুগান্তর ঘটে। এশিয়ার কমিউনিস্ট রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ফলে অনেক এশীয় আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুরু পশ্চিমা দেশগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, প্রায়শই শরণার্থী হিসেবে।[১২৮]:৭ ধ্যানের আধ্যাত্মিক রূপগুলি ছাড়াও, ধ্যানের ধর্মনিরপেক্ষ রূপগুলিও শেকড় গেরে বসেছে। আধ্যাত্মিক বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষ ধ্যান চাপ হ্রাস, মন ও দেহ হালকা করা এবং আত্ম-উন্নতিতে বেশি জোর দেয়।[১২৯][১৩০]
ধ্যানের প্রক্রিয়া এবং প্রভাবগুলির উপর গবেষণা স্নায়বিক গবেষণার একটি অপ্রধান অংশ।[৯] ধ্যানের সময় স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি যেমন এফএমআরআই এবংইইজি, ব্যবহৃত হয়।[১৩১] ধ্যানগবেষণার গুণগত মান বিষয়ে উদ্বেগ উত্থাপিত হয়েছে,[১৩২][১৩৩] অংশগ্রহণের ঝোঁক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসহ।[১৩৪]
১৯৭০ এর দশক থেকে ক্লিনিকাল সাইকোলজি এবংসাইকিয়াট্রি অসংখ্য মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার জন্য ধ্যানের কৌশল তৈরি করেছে।[১৩৫] মননশীলতার অনুশীলন মানসিক এবং শারীরিক পরিস্থিতি যেমন হতাশা, চাপ এবং উদ্বেগ উপশম করতে মনোবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৯][১৩৬][১৩৭]মাদকাসক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেসও ব্যবহৃত হয়, যদিও এ সংক্রান্ত গবেষণা নিম্নমানের।[১৩৩][১৩৮] গবেষণাগুলোর তথ্যমতে, ব্যথা কমাতে ধ্যানের একটি মাঝারি প্রভাব রয়েছে। ইতিবাচক মেজাজ, মনোযোগ, খাদ্যাভাস, ঘুম, বা শরীরের ওজনের ওপর ধ্যানের প্রভাব আছে কি না তার পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
সহানুভূতি, সমবেদনা, এবং সামাজিক আচরণে মেডিটেশনের প্রভাব সংক্রান্ত ২০১৭ সনের একটি পর্যালোচনা এবং মেটা-এনালাইসিসে দেখা গেছে যে, নিজের বলা এবং মেডিটেশন অভ্যাসগুলির স্ব-প্রতিবেদনিত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য ফলাফলের উপর ছোট থেকে মাঝারি প্রভাব আছে। সারাংশ হল, এই ধরনের চর্চা ইতিবাচক আবেগ ও সামাজিক আচরণ উন্নত করতে পারে।[১৩৯]
২০১২ ইউএস জাতীয় স্বাস্থ্য সাক্ষাৎকার সমীক্ষায় (এনএইচআইএস) (৩৪,৫২৫ টি বিষয়ে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্ত ৮০% প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মেডিটেশন ব্যবহার করা হয়েছে,[১৪০] আজীবন এবং ১২ মাসের ধ্যানের ব্যবহারের যথাক্রমে ৫.২% এবং 4.১% ব্যবহার রয়েছে।[১৪১] ২০১৭ এনএইচআইএস জরিপে, শ্রমিকদের মধ্যে মেডিটেশনের ব্যবহার ছিল ১০% (২০০২সালে ৮% থেকে বেশি)।[১৪২]
মনোবিজ্ঞানী টমাস জেন্ডার যুক্তি দেখান যে, আধুনিক মননশীল মেডিটেশন সেলিব্রিটিদের মাধ্যমে বাণিজ্যিক লাভের জন্য "দূষিত" করা হয়েছে। তার তথ্য মতে, এটি অস্বাস্থ্যকর আত্মমুগ্ধতা এবং স্ব-আবেগযুক্ত মানসিকতাকে উৎসাহিত করে।[১৪৩][১৪৪]
২০১২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, কমপক্ষে দুই মাসের ধ্যানের অভিজ্ঞতাসহ নিয়মিত মেডিটেশনকারীদের প্রায় এক চতুর্থাংশের মধ্যে বিশেষ কিছু অপ্রীতিকর ধ্যান-সম্পর্কিত বিষয় (যেমন উদ্বেগ, ভয়, বিকৃত আবেগ বা চিন্তা, স্ব-পরিবর্তিত বোধ বা বিশ্ব) দেখা দেয়, যা তাদের ধারণায় তাদের ধ্যান অনুশীলনের ফলেই হয়েছে। উচ্চ স্তরের পুনরাবৃত্তিমূলক নেতিবাচক চিন্তাক্লিষ্ট ধ্যানকারীরা এবং যারা কেবলমাত্র উদ্বেগমূলক ধ্যান করতে ব্যস্ত তাদের অপ্রীতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ধরনের বিরূপ প্রভাব মহিলা এবং ধর্মীয় ধ্যানকারীদের মধ্যে কম দেখা যায়।[১৪৯]
ধ্যানের ক্ষেত্রে সম্মুখীন হওয়া জটিল অভিজ্ঞতাগুলি সনাতন উৎসগুসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে; যার কতিপয়কে ধ্যানপ্রক্রিয়ার কেবলমাত্র একটি প্রত্যাশিত অংশ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে বর্ণিত শুদ্ধির সাতটি ধাপ, বা ভিপাসানা মেডিটেশনের ব্যবহারিক ম্যানুয়ালে উল্লিখিত সম্ভাব্য "অশ্লীল বা ভয়ঙ্কর দৃষ্টি"।[১৫০]
অনেক বৃহৎ ঐতিহ্যে যেখানে ধ্যানচর্চা করা হয়, যেমন বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম,[১৫১] সদস্যদের মাদক সেবন না করার পরামর্শ দেয়। অন্যদিকে যেমন রাস্তাফেরিয়ান আন্দোলন এবং নেটিভ আমেরিকান চার্চ মাদককে তাদের ধর্মীয় জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য হিসাবে দেখে।
পঞ্চসিলার পাঁচটি বিধানের পঞ্চমটি,থেরবাদ ওমহাযানবৌদ্ধঐতিহ্যের নৈতিক নীতিতে বলা হয়েছে যে, আনুগত্যকারীকে অবশ্যই গাজনকৃত এবং পাতিত ঐসব অচেতনকারীপানীয় থেকে বিরত থাকতে হবে।
অন্যদিকে, চেতনা বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য অনেক ধর্মের রীতিতে মাদক গ্রহণ একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েক ধরনের ঐতিহ্যবাহী শমনীয় অনুষ্ঠানে, মাদক ধর্মীয় আচারের অনুঘটক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।রাস্তাফারি অনুশীলনে গাঁজাকে জাহের কাছ থেকে পাওয়া উপহার এবং নিয়মিত ব্যবহার করার জন্য একটি পবিত্রওষধি হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। তবে এ ধর্মে অ্যালকোহলকে মানুষকে হতাশাসৃষ্টিকারী বলে বিবেচনা করা হয়। স্থানীয় আমেরিকানরা আজও অব্যাহত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে পিয়োট ব্যবহার করে।[১৫২]
↑For instance, Kamalashila (2003), p. 4, states that Buddhist meditation "includes any method of meditation that hasEnlightenment as itsultimate aim." Likewise, Bodhi (1999) writes: "To arrive at the experiential realization of the truths it is necessary to take up the practice of meditation.... At the climax of such contemplation the mental eye ... shifts its focus to the unconditioned state,Nibbana...." A similar although in some ways slightly broader definition is provided by Fischer-Schreiberet al. (1991), p. 142: "Meditation – general term for a multitude of religious practices, often quite different in method, but all having the same goal: to bring the consciousness of the practitioner to a state in which he can come to an experience of 'awakening,' 'liberation,' 'enlightenment.'" Kamalashila (2003) further allows that some Buddhist meditations are "of a more preparatory nature" (p. 4).
↑ThePāli andSanskrit wordbhāvanā literally means "development" as in "mental development." For the association of this term with "meditation," see Epstein (1995), p. 105; and, Fischer-Schreiberet al. (1991), p. 20. As an example from a well-known discourse of thePali Canon, in "The Greater Exhortation to Rahula" (Maha-Rahulovada Sutta,MN 62), Ven.Sariputta tells Ven.Rahula (in Pali, based onVRI, n.d.):ānāpānassatiṃ, rāhula, bhāvanaṃ bhāvehi.Thanissaro (2006) translates this as: "Rahula, develop the meditation [bhāvana] ofmindfulness of in-&-out breathing." (Square-bracketed Pali word included based on Thanissaro, 2006, end note.)
↑See, for example,Thanissaro (1997); as well as, Kapleau (1989), p. 385, for the derivation of the word "zen" fromSanskrit "dhyāna".Pāli Text Society Secretary Rupert Gethin, in describing the activities ofwandering ascetics contemporaneous with the Buddha, wrote:
[T]here is the cultivation of meditative and contemplative techniques aimed at producing what might, for the lack of a suitable technical term in English, be referred to as "altered states of consciousness". In the technical vocabulary of Indian religious texts such states come to be termed "meditations" ([Skt.:]dhyāna / [Pali:]jhāna) or "concentrations" (samādhi); the attainment of such states of consciousness was generally regarded as bringing the practitioner to deeper knowledge and experience of the nature of the world. (Gethin, 1998, p. 10.)
↑Goldstein (2003) writes that, in regard to theSatipatthana Sutta, "there are more than fifty different practices outlined in this Sutta. The meditations that derive from these foundations of mindfulness are calledvipassana..., and in one form or another – and by whatever name – are found in all the major Buddhist traditions" (p. 92). The forty concentrative meditation subjects refer toVisuddhimagga's oft-referenced enumeration. Regarding Tibetan visualizations, Kamalashila (2003), writes: "The Tara meditation ... is one example out of thousands of subjects for visualization meditation, each one arising out of some meditator's visionary experience of enlightened qualities, seen in the form ofBuddhas andBodhisattvas" (p. 227).
↑Examples of contemporary school-specific "classics" include, from the Theravada tradition,Nyanaponika (1996) and, from the Zen tradition, Kapleau (1989).
12"Definition of meditate"। Merriam-Webster Dictionary। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭।
12"meditate"।Oxford Dictionaries – English। ২৯ মে ২০১৯ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০২১।
↑For the 14thDalai Lama the aim of meditation is "to maintain a very full state of alertness and mindfulness, and then try to see the natural state of your consciousness."
↑An influential definition by Shapiro (1982) states that "meditation refers to a family of techniques which have in common a conscious attempt to focus attention in a nonanalytical way and an attempt not to dwell on discursive, ruminating thought" (p. 6, italics in original). The term "discursive thought" has long been used in Western philosophy, and is often viewed as a synonym to logical thought (Rappe, Sara (২০০০)।Reading neoplatonism: Non-discursive thinking in the texts of plotinus, proclus, and damascius। Cambridge; New York: Cambridge University Press।আইএসবিএন৯৭৮-০-৫২১-৬৫১৫৮-৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]).
↑Bond, Ospina et al. (2009) report that 7 expert scholars who had studied different traditions of meditation agreed that an "essential" component of meditation "Involves logic relaxation: not 'to intend' to analyze the possible psychophysical effects, not 'to intend' to judge the possible results, not 'to intend' to create any type of expectation regarding the process" (p. 134, Table 4). In their final consideration, all 7 experts regarded this feature as an "essential" component of meditation; none of them regarded it as merely "important but not essential" (p. 234, Table 4). (This same result is presented in Table B1 in Ospina, Bond, et al., 2007, p. 281)
↑This does not mean that all meditation seeks to take a person beyondall thought processes, only those processes that are sometimes referred to as "discursive" or "logical" (see Shapiro, 1982/1984; Bond, Ospina, et al., 2009; Appendix B, pp. 279–82 in Ospina, Bond, et al., 2007).
↑Kenneth Bond; Maria B. Ospina (২০০৯)। "Defining a complex intervention: The development of demarcation criteria for "meditation"":১২৯–১৩৭।ডিওআই:10.1037/a0015736।{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}:উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
↑The full quote from Bond, Ospina et al. (2009, p. 130) reads: "The differences and similarities among these techniques is often explained in the Western meditation literature in terms of the direction of mental attention (Koshikawa & Ichii, 1996; Naranjo, 1971; Orenstein, 1971): A practitioner can focus intensively on one particular object (so-calledconcentrative meditation), on all mental events that enter the field of awareness (so-calledmindfulness meditation), or both specific focal points and the field of awareness (Orenstein, 1971)."
↑For a general overview seeBeads of Faith: Pathways to Meditation and Spirituality Using Rosaries, Prayer Beads, and Sacred Words by Gray Henry, Susannah Marriott 2008আইএসবিএন১-৮৮৭৭৫২-৯৫-১
↑Alexander Wynne, The Origin of Buddhist Meditation. Routledge 2007, p. 51. The earliest reference is actually in the Mokshadharma, which dates to the early Buddhist period.
↑The Katha Upanishad describes yoga, including meditation. On meditation in this and other post-Buddhist Hindu literature see Randall Collins, The Sociology of Philosophies: A Global Theory of Intellectual Change. Harvard University Press, 2000, p. 199.
↑These definitions ofsamatha andvipassana are based on the "Four Kinds of Persons Sutta" (AN 4.94). This article's text is primarily based on Bodhi (2005), pp. 269–70, 440n. 13. See alsoThanissaro (1998d).
↑Sharma, Suresh (২০০৪)।Cultural and Religious Heritage of India: Sikhism। Mittal Publications। পৃ.৭।আইএসবিএন৯৭৮-৮১-৭০৯৯-৯৬১-৪।
12"Meditation: In depth"। National Center for Complementary and Integrative Health, US National Institutes of Health। ১ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৯।
12Eugene Taylor (১৯৯৯)।"Introduction":১–৩২। ১৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২১।{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}:উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal= প্রয়োজন (সাহায্য)
↑A clinical guide to the treatment of human stress response by George S. Everly, Jeffrey M. Lating 2002আইএসবিএন০-৩০৬-৪৬৬২০-১ page 200
↑Encyclopedia of Psychology and Religion by David A. Leeming, Kathryn Madden, Stanton Marlan 2009 ISBN page 559
↑Fox, Kieran C.R.; Nijeboer, Savannah (২০১৪)। "Is meditation associated with altered brain structure? A systematic review and meta-analysis of morphometric neuroimaging in meditation practitioners":৪৮–৭৩।ডিওআই:10.1016/j.neubiorev.2014.03.016।পিএমআইডি24705269।{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}:উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal= প্রয়োজন (সাহায্য)