দাসত্ব বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তিকেসম্পত্তি হিসেবে অধিকারভুক্ত করা, বিশেষ করে তার শ্রমকে কেন্দ্র করে।[১] দাসত্ব সাধারণত জোরপূর্বক শ্রমের সঙ্গে জড়িত, যেখানে দাসের কাজের স্থান এবং বাসস্থান নির্ধারণ করে দাসাধিপতি।দাসত্বে পরিণত করা বলতে বোঝায় কাউকে দাসে পরিণত করা, আর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়দাস বাদাসত্বে নিপতিত ব্যক্তি (দেখুন:টেমপ্লেট:§l)।
জাঞ্জিবার সালতানাতের এক দাস বালকের ছবি, শিরোনাম "এক আরব প্রভুর সামান্য অপরাধের জন্য শাস্তি", আনুমানিক ১৮৯০
ঐতিহাসিকভাবে বহু ব্যক্তি আইন ভঙ্গ, ঋণের দায়, যুদ্ধে পরাজয় অথবা সস্তা শ্রমের জন্য শোষণের মাধ্যমে দাসে পরিণত হয়েছে। আবার অনেক সমাজে দাসত্ব আরোপ করা হয়েছেজাতি বালিঙ্গভিত্তিক ব্যবধানের মাধ্যমে। অনেক সময় দাসদের সারাজীবনের জন্য দাসত্বে আবদ্ধ রাখা হতো, আবার কখনো নির্দিষ্ট সময় পরেমুক্তি দেওয়া হতো।[২] যদিও দাসত্ব সাধারণত অনিচ্ছাকৃত এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হয়, কিছু ক্ষেত্রে লোকেরাস্বেচ্ছায় দাসত্বে প্রবেশ করে ঋণ শোধ বা দারিদ্র্যের কারণে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে।
চাটেল দাসত্বে, দাসকে আইনগতভাবে দাসাধিপতিরব্যক্তিগত সম্পত্তি (চাটেল) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থনীতির ভাষায়,বাস্তবিক দাসত্ব বলতে বোঝায়অসাংবিধানিক শ্রম ওজবরদস্তিমূলক শ্রম-এর পরিস্থিতি, যা অধিকাংশ দাসের জীবনে ঘটে থাকে।[৮]
বিশ্বের শেষ দেশ হিসেবেইসলামী প্রজাতন্ত্র মরিতানিয়া ১৯৮১ সালে দাসত্ব নিষিদ্ধ করে,[৯] এবং ২০০৭ সালে দাসাধিপতিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।[১০] তবে ২০১৯ সালেও প্রায় ৪ কোটির মতো মানুষ দাসত্বের শিকার ছিল, যাদের মধ্যে প্রায় ২৬% ছিল শিশু। আধুনিক যুগে ৫০% এর বেশি দাসজবরদস্তিমূলক শ্রম দিয়ে থাকে, যা সাধারণতকারখানা এবংঘর্মশালাগুলিতে ঘটে থাকে এবং এগুলো সাধারণতবেসরকারি খাতে হয়।[১১]
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, যা ১৮শ শতক থেকে জানা যায়, গ্রিক শব্দΣκλάβινοι (Sklábinoi) বাΈσκλαβηνοί (Ésklabēnoí), যেটি একটি স্লাভিক জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় *Slověne থেকে এসেছে, তা থেকেইσκλάβος এবংεσκλαβήνος শব্দদ্বয় উদ্ভূত হয়েছে। এই শব্দগুলি ৮ম/৯ম শতকে 'যুদ্ধবন্দী দাস' বা 'দাস' অর্থে ব্যবহৃত হতো, কারণ ঐ সময় স্লাভিক জনগণ প্রায়ই বন্দি হয়ে দাসে পরিণত হতো।[১৪][১৫][১৬][১৭]
তবে এই ব্যাখ্যার বিরোধিতা ১৯শ শতক থেকেই হয়ে আসছে।[১৮][১৯]
একটি বিকল্প আধুনিক মতবাদ অনুসারে,মধ্যযুগীয় লাতিন শব্দsclāvus, যা*scylāvus থেকে এসেছে, তার উৎস হতে পারে বাইজান্টাইন গ্রিকσκυλάω (skūláō বাskyláō) এবংσκυλεύω (skūleúō,skyleúō)। এই শব্দগুলোর অর্থ ‘যুদ্ধে নিহত শত্রুর দেহ লুট করা’ বা ‘যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংগ্রহ করা’।[২০][২১][২২][২৩] তবে এই ব্যাখ্যাও সমালোচনার মুখে পড়েছে।[২৪]
ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে যে, দাসত্বের শিকার ব্যক্তিদের বর্ণনার ক্ষেত্রেঅস্বাধীন শ্রমিক বাদাসত্বে নিপতিত ব্যক্তি– এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিত কি না, নাকি শুধুইদাস শব্দটিই যথাযথ। যাঁরা পরিভাষা পরিবর্তনের পক্ষে, তাঁদের মতেদাস শব্দটি ভাষাগতভাবে দাসত্বের অপরাধকে চিরস্থায়ী করে তোলে, কারণ এটি ভুক্তভোগীদের মানুষ হিসেবে নয়, বরং সম্পত্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। তাই তাঁদের মতে, ভাষায় পরিবর্তনের মাধ্যমে দাসদের ‘সম্পত্তি’ নয়, ‘মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত (দেখুন:ব্যক্তি-প্রথম ভাষা)।
অন্যদিকে, কিছু ঐতিহাসিকদাস শব্দটির পক্ষপাতী, কারণ এটি পরিচিত এবং সংক্ষিপ্ত। আবার অনেকের মতে, এই শব্দটি দাসত্বের অমানবিক বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, যেখানেব্যক্তি শব্দটি এমন এক স্বায়ত্তশাসনের ইঙ্গিত দেয়, যা দাসত্বের মধ্যে অনুপস্থিত।[২৫]
তবে দাসত্ব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েনিওলিথিক বিপ্লবের সময় প্রায় ১১,০০০ বছর আগেকৃষি আবিষ্কারের পর থেকে।[২৬] প্রায় সবপ্রাচীন সভ্যতায় দাসত্ব চর্চা করা হতো।[৩] এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ছিল ঋণ-ভিত্তিক দাসত্ব, অপরাধের শাস্তিস্বরূপ দাসত্ব,যুদ্ধে বন্দি হওয়া ব্যক্তিদের দাসে রূপান্তর, শিশু পরিত্যাগের ফলে দাসত্বে পতন, এবং দাসদের সন্তানদের দাস করে রাখার প্রথা।[২৭]
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দেশে আধুনিক দাসত্বের হার
যদিও বর্তমানে বিশ্বের সব দেশেই দাসত্ব আইনত নিষিদ্ধ, তবুও আজকের দিনে আনুমানিক ১.২ কোটি থেকে ২.৯৮ কোটি মানুষ দাসত্বের শিকার বলে ধারণা করা হয়।[২৮][২৯][৩০]
দাসত্বের একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা অনুসারে, ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২.৭ কোটি মানুষ দাসত্বে আবদ্ধ ছিল।[৩১] ২০০৫ সালেআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটি প্রতিবেদনে ১.২৩ কোটি জোরপূর্বক শ্রমিকের কথা বলা হয়।[৩২]
সিদ্ধার্থ কারা ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে ২.৮৪ কোটি দাসের হিসাব দেন, যা তিনটি ভাগে বিভক্ত:ঋণদাসত্ব বাঋণজনিত দাসত্ব (১.৮১ কোটি), জোরপূর্বক শ্রম (৭৬ লক্ষ), এবং পাচারকৃত দাস (২৭ লক্ষ)।[৩৩] তিনি এক ধরনের গতিশীল মডেলও প্রস্তাব করেছেন, যার ভিত্তিতে প্রতি বছর বিশ্বে দাসের সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়। তার হিসাবে, ২০০৯ সালের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ছিল ২.৯২ কোটি।
তুয়ারেগ সমাজ ঐতিহ্যগতভাবে শ্রেণিভিত্তিক, যেখানে আছে অভিজাত, অনুগত এবং গাঢ় ত্বকের দাস শ্রেণি।[৩৪]
২০০৩ সালেহিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,ভারতে ঋণদাসত্বে প্রায় ১.৫ কোটি শিশু কাজ করছে, যারা তাদের পরিবারের ঋণ শোধের জন্য দাসত্বসদৃশ পরিবেশে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত।[৩৫][৩৬]
স্লাভোই জিজেক মত দেন যে, ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিকপুঁজিবাদী যুগে সমসাময়িক দাসত্বের নতুন রূপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছেআরব উপদ্বীপে বেসিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত অভিবাসী শ্রমিক,এশিয়ারঘর্মশালাগুলিতে শ্রমিকদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, এবংমধ্য আফ্রিকায় প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণে জোরপূর্বক শ্রমের ব্যবহার।[৩৭]
↑Pargas, Damian (২০২৩)। "Introduction: Historicizing and Spatializing Global Slavery"।The Palgrave Handbook of Global Slavery throughout History। Palgrave MacMillan।আইএসবিএন৯৭৮-৩০৩১১৩২৬২৯।
↑Engerman, Stanley; Paquette, Robert; Drescher, Seymour, সম্পাদকগণ (২০০১)।Slavery (Oxford Reader) (Reprinted সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃ.১।আইএসবিএন৯৭৮০১৯২৮৯৩০২৪।By the end of the twentieth century, slavery was no longer legally or morally acceptable anywhere in the world. Only two centuries ago, slavery was still among the most ubiquitous institutions in human societies, and had existed in most times and places throughout history.
↑Corrigan, Terence (৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭)।"মরিতানিয়া: দেশটি গত মাসে দাসত্ব নিষিদ্ধ করেছে"।South African Institute of International Affairs। The East African Standard। ৪ আগস্ট ২০১১ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০০৮।
↑Kluge, Friedrich (১৮৯৯)।"Artikel Sklave"[Article Slave]।Etymologisches Wörterbuch Der Deutschen Sprache[Etymological dictionary of the German language] (জার্মান ভাষায়) (6 সংস্করণ)। Strassburg: Trübner। পৃ.৩৬৬।
↑Korth, Georg (১৯৭০)। "Zur Etymologie des Wortes 'Slavus' (Sklave)"[On the etymology of the word 'Slavus' (slave)]।Glotta, Zeitschrift für Griechische und Lateinische Sprache (জার্মান ভাষায়)।৪৮ (1/2)। Göttingen: Vandenhoeck & Ruprecht (GmbH & Co. KG):১৪৫–১৫৩।জেস্টোর40266114।
↑Ditten, Hans (১৯৭২)। "Kritik an G. Korth"।Byzantinoslavica। খণ্ড৩৩। Prague: Academia, de l'Academie Tchecoslovaque des Sciences et Lettres। পৃ.১৮৩–১৮৪।
Berlin, Ira.Many Thousands Gone: The First Two Centuries of Slavery in North America (1999), most important recent survey
Blackmon, Douglas A.Slavery by Another Name: The Re-Enslavement of Black Americans from the Civil War to World War II Doubleday (March 23, 2008),আইএসবিএন০-৩৮৫-৫০৬২৫-২আইএসবিএন৯৭৮-০-৩৮৫-৫০৬২৫-০
Phillips, Ulrich B.American Negro Slavery:A Survey of the Supply, Employment and Control of Negro Labor as Determined by the Plantation Regime (1918; paperback reprint 1966), southern white perspective
Phillips, Ulrich B.Life and Labor in the Old South (1929)
Sellers, James B.Slavery in Alabama (1950).
Sydnor, Charles S.Slavery in Mississippi (1933
Stampp, Kenneth M.The Peculiar Institution: Slavery in the Ante-Bellum South (1956), a rebuttal of U B Philipps
Jesse Sage and Liora Kasten,Enslaved: True Stories of Modern Day Slavery, Palgrave Macmillan, 2008আইএসবিএন৯৭৮-১-৪০৩৯-৭৪৯৩-৮
Tom Brass, Marcel van der Linden, and Jan Lucassen,Free and Unfree Labour. Amsterdam: International Institute for Social History, 1993
Tom Brass,Towards a Comparative Political Economy of Unfree Labour: Case Studies and Debates, London and Portland, OR: Frank Cass Publishers, 1999. 400 pages.
Tom Brass and Marcel van der Linden, eds.,Free and Unfree Labour: The Debate Continues, Bern: Peter Lang AG, 1997. 600 pages. A volume containing contributions by all the most important writers on modern forms of unfree labour.