খিলাফত (আরবি:خِلَافَةْ[xi'laːfah]) একটি ইসলামি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি দপ্তর, যেটিখলিফা (/ˈkælɪf,ˈkeɪ-/;خَلِيفَةْkhalīfa[xæ'liːfæh],উচ্চারণⓘ) উপাধিধারী মুসলিম বৈশ্বিক বা কেন্দ্রীয় আমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।[১][২][৩] খলিফা রাজনীতি-ধর্মীয়ভাবে ইসলাম ধর্মের নবিমুহাম্মাদের উত্তরসূরি ও সমগ্রমুসলিম বিশ্বের (উম্মাহ) নেতৃত্ব প্রদান করেন।[৪] ঐতিহাসিকভাবে, খেলাফতগুলি ইসলামের উপর ভিত্তি করে রাজনীতিতে ছিল, যেগুলি বহু-জাতিগত স্থানীয় রাষ্ট্রীয় সত্তার উর্ধ্বে গিয়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে বিকশিত হয়েছিল।[৫][৬]
মধ্যযুগীয় সময়কালে তিনটি প্রধান খিলাফত ক্ষমতায় ছিল–খিলাফতে রাশিদা (৬৩২-৬৬১),উমাইয়া খিলাফত (৬৬১-৭৫০), এবংআব্বাসীয় খিলাফত (৭৫০-১৫১৭)। চতুর্থ প্রধান খিলাফত ছিলউসমানীয় খিলাফত, যেটিউসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানরা ১৫১৭ থেকে ১৯২৪ সালে তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষকরণের অংশ হিসাবে উসমানীয় খিলাফতআনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত খলিফার কর্তৃত্ব দাবি করেছিল। একই সময়েশরিফীয় খিলাফত খিলাফত ও খলিফার উপাধি সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এই খিলাফতটিনজদের সালতানাতের (বর্তমানসৌদি আরব) হাতে পরাজিত হওয়ার পর দ্রুত পতন ঘটে এবং দাবিটিসুপ্ত অবস্থায় চলে যায়। পুরো ইসলামের ইতিহাসে আরও কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র নিজেদেরকে খিলাফত বলে দাবি করেছিল, যার প্রায় সবকটিই বংশগত রাজতন্ত্র ছিল।
সব মুসলিম রাষ্ট্রে খেলাফত ছিল না।সুন্নি মুসলিমরা শর্ত দেন যে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খলিফাকে মুসলমান বা তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে।[৭] অপরদিকেশিয়ারা বিশ্বাস করেন যে, খলিফাকেআহলে বাইত ("নবি পরিবার") থেকে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ইমাম হওয়া উচিত। ইতিহাসে কিছু প্রভাবহীন খিলাফত শিয়া মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, যেমনফাতেমীয় খিলাফত (৯০৯-১১৭১)। ২০ শতকের শেষ থেকে ২১ শতকের গোড়ার দিকে,সোভিয়েত দ্বারা আফগানিস্তানে আক্রমণ,সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবংআরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে, বিভিন্নইসলামপন্থী দল খিলাফত দাবি করেছে। সাম্প্রতিক সময় মুসলিমদের মধ্যে খিলাফতের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে, আরবীয় রাজারা ঐতিহ্যগতভাবেমালিক 'বাদশাহ' উপাধি ব্যবহার করতেন বা একই সেমিটিক মূল থেকে অন্য একটি উপাধি ব্যবহার করতেন।[৪] খলিফাহ (خَليفة,উচ্চারণⓘ)আরবি শব্দ, যার অর্থ 'উত্তরাধিকারী', 'স্টুয়ার্ড', বা 'ডেপুটি'—এবং ঐতিহ্যগতভাবে খলিফা শব্দটিকে খলিফাতু রাসুলিল্লাহ (আল্লাহর রাসুলের উত্তরসূরি) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যাইহোক, প্রাক-ইসলামী গ্রন্থের অধ্যয়ন থেকে জানা যায় যে এই শব্দগুচ্ছটির আসল অর্থ ছিল 'ঈশ্বরের দ্বারা নির্বাচিত উত্তরাধিকারী'।[৪]
কুরআনে নবি দাউদকে খিলাফত দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
"হে দাউদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো, আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য কঠিন আজাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।"
সুস্পষ্ট কুফরে লিপ্ত শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মাধ্যমে বিদ্রোহ করা ইসলামে বৈধ যদি সামর্থ থাকে, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।[৮]
৬২২ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহানবি হজরতমুহাম্মাদ -এর অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।
৬৩২ থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাশিদুন খিলাফতের অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।
৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উমাইয়া খিলাফতের অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।
৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের নবি ও রাসুলমুহাম্মাদ (সা.)মদিনায় প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করে খেলাফতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তার মৃত্যুর পর পরবর্তী খলিফা সাহাবিআবু বকর নির্বাচিত হন এবং ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দেরাশিদুন খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর সাহাবিমুয়াবিয়া কর্তৃকউমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়। উমাইয়া খিলাফতের পরআব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয়।[৯][১০] ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের আক্রমণে খিলাফতের রাজধানীবাগদাদ ধ্বংস হয় ও খেলাফত বিলুপ্ত হয়। মিশরের মামলুক শাসকদের দ্বারা পুনরায় আব্বাসীয় খেলাফত পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৫১৭ উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানপ্রথম সেলিমের কাছে মিশরের আব্বাসী খলিফা কর্তৃক খেলাফত হস্তান্তরিত হলেউসমানীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।[১১] যদিওপ্রথম মুরাদ (১৩৬২-১৩৮৯)[১২] সালে মামলুক সালতানাতের বৈধ দাবিদার না থাকায় খিলাফাতের দাবি করে। ১৯০৯ সালেতরুণ তুর্কি বিপ্লব এর মাধ্যমে খলিফাদ্বিতীয় আবদুল হামিদ অপসারণ এবং ১৯১৮ সালেরপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ মিত্র বাহিনী ওআরব বিদ্রোহ জাতীয়তাবাদীদের হাতে উসমানী খেলাফত বিলুপ্তির মুখে পড়ে। ১৯২৪ সালে সর্বশেষ খলিফাদ্বিতীয় আবদুল মজিদকে নির্বাসিত করেকামাল আতাতুর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত বিলুপ্ত করে।
Crone, Patricia; Hinds, Martin (১৯৮৬),God's Caliph: Religious Authority in the First Centuries of Islam (ইংরেজি ভাষায়), Cambridge, England: Cambridge University Press,আইএসবিএন৯৭৮-০-৫২১-৩২১৮৫-৩
↑Hassan, Mona (২০১৬)। "CONCEPTUALIZING THE CALIPHATE, 632–1517 CE"।Longing for the Lost Caliphate: A Transregional History। Princeton University Press। পৃ.৯৮–১৪১।জেস্টোরj.ctt1q1xrgm.9।