ওয়ারশ' (পোলীয়:Warszawa,ইংরেজি:/ˈwɔːrsɔː/WOR-saw[varˈʂava](শুনুনⓘ)) আনুষ্ঠানিকভাবেক্যাপিটাল সিটি অফ ওয়ারশ,পোল্যান্ডেররাজধানী ও বৃহত্তমশহর। প্রশাসনিকভাবে এটি দেশটিরমাজোভিয়েৎস্কিয়ে প্রদেশের রাজধানী ওমাজোভিয়া অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র। ভৌগোলিকভাবে শহরটি পোল্যান্ডের কেন্দ্রভাগেভিস্তুলা নদীর তীরে অবস্থিত। ওয়ারশ শহরে পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আইনসভা, সর্বোচ্চ আদালত ও অন্যান্য সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কার্যালয়গুলি অবস্থিত। মূল শহরের জনসংখ্যা ১৭ লক্ষ ৭০ হাজার, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ৮ম সর্বোচ্চ।[২] এছাড়া ওয়ার'শ মহানগর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৩১ লক্ষ। মূল শহরের আয়তন ৫১৭ বর্গকিলোমিটার ও মহানগর এলাকার আয়তন ৬১০০ বর্গকিলোমিটার।[৩]
১৩শ শতকের শেষদিকে জেলেদের একটি গ্রাম হিসেবে লোকালয়টির যাত্রা শুরু হয়। ১৪শ শতকে (১৩৪৪) এটি মাজোভিয়ার ডিউকদের (জমিদার) রাজধানীতে পরিণত হয়।[৪] ১৫২৬ সালে এটি পোল্যান্ডের অংশে পরিণত হয়। ১৫৬৯ সালে পোল্যান্ডের রাজা ৩য় সিগিসমুন্দ ক্রাকোভের রাজপ্রাসাদের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে সেখান থেকে ওয়ারশ-তে তার রাজদরবার স্থানান্তর করেন। ওয়ারশ ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলির একটি হিসেবে গণ্য হত; এমনকি তখন একে “উত্তরেরপ্যারিস” হিসেবেও ডাকা হত।[৫]
প্রতিবেশী তিন শক্তি- পশ্চিমেরজার্মানি, উত্তরেরসুইডেন ও পূর্বেররাশিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ওয়ার'শ ঐ তিন দেশের মধ্যে রেষারেষির শিকার হয়েছে ইতিহাসে বার বার। ১৬৫৬ ও ১৭০২ সালে সুয়েডীয়রা শহরটির আংশিক ধ্বংসসাধন করে। ১৮শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রাজা ২য় স্তানিসলাসের সময় স্বাধীন শহরটি এর হৃত শৌর্য আবার ফিরে পায়। কিন্তু ১৮শ শতকের শেষভাগে শহরটি জার্মানভাষী প্রুশয়ার অধীনে আসে। ১৯শ শতকের শুরুতে নেপোলিয়নের সুবাদে ওয়ারশ' স্বাধীন ডিউকরাজ্যের মর্যাদালাভ করলেও শীঘ্রই রাশিয়ার প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে এবং ১ম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এ অবস্থাতেই থাকে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান আক্রমণে শহরটির প্রায় পুরোটাই (৮৫%) ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল; জনসংখ্যা কমে এক-দশমাংশে পরিণত হয়। যুদ্ধের পরে সোভিয়েতরা পোল্যান্ডকে একটি উপগ্রহ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলে; সেসময় সোভিয়েত আর্থিক সাহায্যে ওয়ারশ’র ঐতিহাসিক পুরাতন শহরটিকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পুনর্নির্মাণ করা হয়, যার কারণে শহরটির আরেক ডাকনাম "ফিনিক্স নগরী" (পৌরাণিক ফিনিক্স পাখি নিজের চিতাভস্ম থেকে পুনরুজ্জীবন লাভ করেছিল)।
১৯৮৯ সালেসাম্যবাদের অবসানের পরে এবং ১৯৯০-এর দশকের অর্থনৈতিক তেজ বৃদ্ধির সাথে সাথে শহরে নতুন নতুন কার্যালয় ভবন ও হোটেল নির্মিত হয়, ফলে শহরেরদিগন্ত রূপরেখায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বর্তমানে প্যারিস, লন্ডন ও ফ্রাংকফুর্টের পাশাপাশি ওয়ার'শ সর্বোচ্চ গগনচুম্বী অট্টালিকার অধিকারী ইউরোপীয় নগরীগুলির একটি। শহরকেন্দ্রে অবস্থিত কীর্তিস্তম্ভতুল্য সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান প্রাসাদ ওয়ার'শ-র বৈশিষ্ট্যসূচক স্থাপনা। ১৯৮০ সালে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক শহরকেন্দ্রটিকে একটিবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা দেয়। শহরকেন্দ্রের মধ্যযুগীয় বাজার-চত্বরটিকে ঘিরে আছে রনেসঁস ও বারোক ঘরানার কিছু ভবন। শহরের প্রাসাদ, গির্জা ও অভিজাত বাসভবনগুলির স্থাপত্যে প্রায় সমস্ত প্রধান প্রধান ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর ছাপ সুস্পষ্ট; শহরকেন্দ্র থেকে হাঁটলেই গোথিক, রনেসঁস, বারোক ও নব্যধ্রুপদী পর্বের সব স্থাপত্যের চমকপ্রদ সব উদাহরণ চোখে পড়ে। কাছেই নদীর উপরে একটি দ্বীপে রাজা ২য় স্তানিসলাসের গ্রীষ্মকালীন বাসভবনটি রয়েছে, যার আরেক নাম “ভাসমান প্রাসাদ”। শহরটি সবুজ, এর এক চতুর্থাংশ এলাকা উদ্যানে আবৃত।[৬]
শহরের জলবায়ু মিশ্র ধরনের; মহাসমুদ্র ও মহাদেশীয় উভয় প্রকারের জলবায়ুই শহরের জলবায়ুতে প্রভাব ফেলেছে। এখানকার গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা উষ্ণ (জুলাই মাসের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২৪.৪° সেলসিয়াস), এসময় ঝড়ো বৃষ্টি হয়। আবার শীতকালে তাপমাত্রা হিমশীতল হয়ে থাকে (জানুয়ারি মাসের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা -৪.২° সেলসিয়াস) এবং এসময় প্রায়ই দীর্ঘ সময় ধরে তুষারপাত হয়।
২য় বিশ্বযুদ্ধের আগে ওয়ার'শ-র জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিলইহুদী।নাৎসিদের পরিকল্পিতগণহত্যার শিকার হয়ে এদের সিংহভাগই (প্রায় ৫ লক্ষ) মৃত্যুবরণ করলেও শহরে এদের সংস্কৃতির ছাপ আজও চোখে পড়ে। এছাড়া ওয়ারশ’ শহরে বিখ্যাত ধ্রুপদী সুরকারফ্রেদেরিক শোপাঁ এবং বিজ্ঞানীনিকোলাউস কোপের্নিকুস ওমারি কুরি-র উদ্দেশ্যে নিবেদিত মূর্তি ও ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে।
শহরটিফ্রেদেরিক শোপাঁ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিমানপথে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত। জনপরিবহনের জন্য বাস, ট্রাম, পাতালরেল ও হালকা নগর রেল ব্যবস্থা আছে। ওয়ার'শ রেল ও মহাসড়ক জালিকার একটি কেন্দ্র যেগুলির মাধ্যমে এটি পোল্যান্ডের সমস্ত বড় শহর ও ইউরোপের অনেক শহরের সাথে সংযুক্ত।
ওয়ার'শ শহরটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর আছে, যাদের সংখ্যা ৩০-এরও বেশি; জাতীয় জাদুঘরে প্রাচীন আফ্রিকান নুবীয় চিত্রকর্ম ছাড়াও ১৪শ থেকে ২১শ শতক পর্যন্ত পোলীয় চিত্রকর্মের সংগ্রহ আছে। প্রতি বছর বইমেলা ছাড়াও এখানে নিয়মিত ভিয়েনিয়াভস্কি ভায়োলিন বা বেহালাবাদন প্রতিযোগিতা ও পঞ্চবাৎসরিকফ্রেদেরিক শোপাঁ পিয়ানোবাদন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিতওয়ার'শ বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। এ শহরেই পোল্যান্ডের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি ও প্রায় ২০০০ আসনবিশিষ্ট মহানাট্যশালাটি অবস্থিত।
↑"Warsaw"।goeuro2012.com। ৩ জুন ২০০৮ তারিখেমূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০০৮।{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:|কর্ম=-এ ইটালিক বা গাঢ় লেখা অনুমোদিত নয় (সাহায্য)